পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

७२९ রবীন্দ্র-রচনাবলী স্বপ্ন আমার বন্ধনহীন সন্ধ্যাতারার সঙ্গী মরণযাত্রীদলে, স্বর্ণবরণ কুঙ্কটিকায় অস্তশিখর লজ্যি লুকায় মৌনতলে। এই কথাটা লক্ষ্য করবার ৰিষয় যে, হলস্তবর্ণের হ্রস্ব বা দীর্ঘ যে মাত্রাই থাক পাঠ করতে বাঙালি পাঠকের একটুও বাধে না, ছন্দের ঝোক আপনিই অবিলম্বে তাকে ঠিকমত চালনা করে । পাৎলা করিয়া কাটো কাৎলা মাছেরে, উৎসুক নাৎনি যে চাহিয়া আছে রে । এই ছড়াটা পড়তে গেলে বাঙালি নিঃসংশয়ে স্বতই খণ্ড ৎ-এর পূর্ববর্তী স্বরবর্ণকে দীর্ঘ করে পড়বে। আবার যেমনি নিম্নের ছড়াটি সামনে ধরা— পাৎলা করি কাটো, প্রিয়ে, কাৎলা মাছটিরে, টাটুকা তেলে ফেলে দাও সরযে আর জিরে, ভেটকি যদি জোটে তাহে মাখো লঙ্কাবাটা, যত্ন করে বেছে ফেলো টুকরো যত কাট— অমনি প্রাক-হসন্ত স্বরগুলিকে ঠেলে দিতে এক মুহূর্তও দেরি হবে না। এই যে বাংলা স্বরবর্ণের সজীবতা, একে কোনো কড়া নিয়মের চাপে আড়ষ্ট করে তাকে সর্বত্র সমানভাবে ব্যবহারযোগ্য করা উচিত— এ মত চালালে বাংলা ভাষাকে ফাকি দেওয়া হবে । শুকনো আমসত্বের মধ্যেই সাম্য, কিন্তু সরল আমের মধ্যে বৈচিত্র্য, ভোজে কোনটার দাম বেশি তা নিয়ে তর্ক অনাবশুক । বাংলা প্রাকৃত ভাষার কাব্যে স্বরধ্বনির যে প্রাণবান স্বচ্ছন্দতা আছে সংস্কৃত বাংলা ভাষা, যাকে আমরা সাধুভাষা বলি, তার মধ্যে পড়ে সে কেন জেনানা মেয়ের মতো দেয়ালে আটকা পড়ে গেল । তার কারণ, সংস্কৃত-বাংলা কৃত্রিম ভাষা, ওখানে বাইরের নিয়মের প্রাধান্ত, তার আপন নিয়ম অনেক জায়গায় কুষ্ঠিত। সভাস্থলে একটি আসনে একটি মানুষের স্থান নির্দিষ্ট ; কারো বা দেহ ক্ষীণ, আসনে ফাক থেকে যায়, কারো বা স্কুল দেহ, আসনে ঠেলে বলতে হয় ; কিন্তু গোনাগনতি চৌকি, সীমা নির্দিষ্ট । যদি ফরাশে বলতে হত তা হলে কলেবরের তারতম্য ধরে মর্যাদার আসনের সীমানায় কমিবেশি স্বাভাবিক নিয়মেই ঘটত। কিন্তু সভ্যতার মর্যাদার দিকে দৃষ্টি রেখে স্বভাবের নিয়মকে বাধানিয়মে পাকা করে দিতে হয়। তাতে কিছু পীড়ন ঘটলেও গভীর্ধের পক্ষে তার একটা সার্থকতা আছে। সেইজন্তেই সভার