পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

इल વ્યરત્ર শুামলঘল ৷ বকুলবন । ছায়ে ছায়ে যেন কী স্বর। বাজে মধুর। পারে পারে। এখানেও চোদ্দ অক্ষর। কিন্তু এর চালে পয়ারের মতো সমমাত্রার পদচারণের শাস্তি নেই বলে বিষমমাত্রার ভাগগুলি যতির মধ্যেও গতির ক্টোক রেখে দেয় । খোড়া মানুষের চলার মতো, যতক্ষণ না লক্ষ্যস্থানে গিয়ে বসে পড়ে থেমেও ভালো করে থামতে পারে না । বাংলা চলতি ভাষার মূল সংস্কৃত শব্দের অনেকগুলি স্বরবর্ণই কোনোটা আধখানা কোনোট পুরোপুরি ক্ষয়ে যাওয়াতে ব্যঞ্জনগুলো তাল পাকিয়ে অত্যন্ত পরস্পরের গায়ে-পড়া হয়ে গেছে । স্বরের ধ্বনিই ব্যঞ্জনের ধ্বনিকে অবকাশ দেয়, তার স্বাতন্ত্র্য রক্ষণ করে ; সেগুলো সরে গেলেই ব্যঞ্জনধ্বনি পিঞ্জীভূত হয়ে পড়ে। চলিত এবং চলতি, ঘৃণা এবং ঘেন্না, বসতি এবং বসতি, শব্দগুলো তুলনা করে দেখলেই বোঝা যাবে। সংস্কৃত ভাষায় স্বরধ্বনির দাক্ষিণ্য, আর প্রাকৃত-বাংলায় তার কার্পণ্য, এইটেই হল দুটো ভাষার ধ্বনিগত মূল পার্থক্য। স্বরবর্ণবহুল ধ্বনিসংগীত এবং স্বরবর্ণবিরল ধ্বনিসংগীতে প্রভূত প্রভেদ। এই দুইয়েরই বিশেষ মূল্য আছে। বাঙালি কবি তাদের কাব্যে যথাস্থানে দুটোরই সুযোগ নিতে চান । তারা ধ্বনিরসিক বলেই কোনোটাকেই বাদ দিতে ইচ্ছা করেন না। প্রাকৃত-বাংলার ধ্বনির বিশেষত্ববশত দেখতে পাই, তার ছন্দ তিন মাত্রার দিকেই বেশি ঝুঁকেছে। অর্থাৎ, তার তালট স্বভাবতই একতালাজাতীয়, কাওয়ালিজাতীয় নয় ; সংস্কৃত ভাষায় এই ‘তাল’ শব্দটা দুই সিলেবলএর , বাংলায় লি’ আপন অস্তিম অকার থলিয়ে ফেলেছে, তার জায়গায় টি বা টা যোগ করে শব্দটাকে পুষ্ট করবার দিকে তার বোক । টি ট-এর ব্যবধান যদি না থাকে তবে ঐ নিঃস্বর ধ্বনিটি প্রতিবেশী যে-কোনো ব্যঞ্জন বা স্বরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পূর্ণতা পেতে চায়। রূপসাগরের তলে ডুব দিহু আমি এটা সংস্কৃত-বাংলার ছাদে লেখা । এখানে শব্দগুলো পরস্পর গা-ঘেঁষা নয়। বাংলা প্রাকৃতের অনিবাৰ্ধ নিয়মে এই পদের যে শব্দগুলি হসন্ত, তারা আপনারই স্বরধ্বনিকে প্রসারিত করে ফাক ভরতি করে নিয়েছে। ‘রূপ’ এবং ‘ডুব আপন উকারধ্বনিকে টেনে বাড়িয়ে দিলে। ‘সাগরের’ শব্দ আপন একারকে পরবর্তী হসন্ত র-এর পঙ্গুত চাপা দিতে লাগিয়েছে। এই উপায়ে ওই পদটার প্রত্যেক শব্দ নিজের মধ্যেই নিজের মর্যাদা বাচিয়ে চলেছে। অর্থাৎ এ ছন্দে ডিমক্রেসির প্রভাব নেই। এইরকমের ছন্দে দুই মাত্রার ধ্বনি আপন পদক্ষেপের প্রত্যেক পর্যায়ে যে অবকাশ পায় তা