পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ছনদ S)(ఫి যৌবনকাল পার না হতেই। কও মা সরস্বতী, অমৃতময় বাক্য তোমার, সেনাধ্যক্ষপদে কোন বীরকে বরণ করে পাঠিয়ে দিলেন রণে রঘুকুলের পরম শক্র, রক্ষকুলের নিধি। এতে গাম্ভীর্যের ক্রটি ঘটেছে এ কথা মানব না। এই যে বাংলা বাঙালির দিনরাত্রির ভাষা এর একটি মস্ত গুণ, এ ভাষা প্রাণবান। এইজন্যে সংস্কৃত বলে, ফার্সি বলে, ইংরেজি বলে, সব শব্দকেই প্রাণের প্রয়োজনে আত্মসাৎ করতে পারে। খাটি হিন্দি ভাষারও সেই গুণ। যারা হেড পণ্ডিত মহাশয়ের কাছে পড়ে নি তাদের একটা লেখা তুলে দিই— চক্ষু আঁধার দিলের ধোকায় কেশের আড়ে পাহাড় লুকায়, কী রঙ্গ সাই দেখছে সদাই বলে নিগম ঠাই । এখানে না দেখলেম তারে চিনব তবে কেমন ক’রে, ভাগ্যেতে আখেরে তীরে চিনতে যদি পাই । প্রাকৃত-বাংলাকে গুরুচণ্ডালি দোষ স্পৰ্শই করে না। সাধু ছাদের ভাষাতেই শব্দের মিশেল সয় না । চলতি বাংলাভাষার প্রসঙ্গটা দীর্ঘ হয়ে পড়ল। তার কারণ, এ ভাষাকে যারা প্রতিদিন ঘরে দেন স্থান, র্তাদের অনেকে সাহিত্যে একে অবজ্ঞা করেন । সেটাতে সাহিত্যকে তার প্রাণরসের মূল আধার থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে জেনে আমার আপত্তিকে বড়ো করেই জানালুম । ছন্দের তত্ত্ববিচারে ভাষার অন্তর্নিহিত ধ্বনিপ্রকৃতির বিচার অত্যাবশ্যক, সেই কথাটা এই উপলক্ষে বোঝাবার চেষ্টা করেছি। বাংলা ছন্দের তিনটি শাখা। একটি আছে পুথিগত কৃত্রিম ভাষাকে অবলম্বন করে, সেই ভাষায় বাংলার স্বাভাবিক ধ্বনিরূপকে স্বীকার করে নি। আর-একটি সচল বাংলার ভাষাকে নিয়ে, এই ভাষা বাংলার হসন্ত-শকের ধ্বনিকে আপন বলে গ্রহণ করেছে । আর-একটি শাখার উদগম হয়েছে সংস্কৃত ছন্দকে বাংলায় ভেঙে নিয়ে । শিখরিণী মালিনী মন্দাক্রান্ত শালবিক্রীড়িত প্রভৃতি বড়ো বড়ে গভীরচালের ছন্দ গুরুলঘুম্বরের যথানির্দিষ্ট বিস্তালে অসমান মাত্রাভাগের ছন্দ। বাংলায় আমরা