পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী صناعة (تيا গদ্যসাহিত্যের আরম্ভ থেকেই তার মধ্যে মধ্যে প্রবেশ করেছে ছন্দের অন্তঃশীল ধারা। রস যেখানেই চঞ্চল হয়েছে, রস যেখানেই চেয়েছে রূপ নিতে, সেখানেই শব্দগুচ্ছ স্বতই সজ্জিত হয়ে উঠেছে। ভাবরসপ্রধান গদ্য-আবৃত্তির মধ্যে স্থর লাগে অথচ তাকে রাগিণী বলা চলে না, তাতে তালমানস্করের আভাসমাত্র আছে। তেমনি গদ্যরচনায় যেখানে রসের আবির্ভাব সেখানে ছন্দ অতিনির্দিষ্ট রূপ নেয় না, কেবল তার মধ্যে থেকে যায় ছন্দের গতিলীলা । করবী গাছের প্রতি লক্ষ করলে দেখা যায়, তার ডালে-ডালে জুড়ি-জুড়ি সমানভাগে পত্রবিন্যাস। কিন্তু, বটগাছে সেই প্রশাখাগত স্থনিয়মিত পত্রপর্যায় চোখে পড়ে না । তাতে দেখি বহু শাখা-প্রশাখায় পত্রপুঞ্জের বড়ো-বড়ো স্তবক। এই অনতিসমান রাশীকৃত ভাগগুলি বনস্পতির মধ্যে একটি সামঞ্জস্ত পেয়েছে, তাকে দিয়েছে একটি বৃহৎ চরিত্ররূপ । অথচ, পাথরের যে পিণ্ডীকৃত স্থাবর বিভাগগুলি দেখা যায় পাহাড়ে, এ সেরকম নয় । এর মধ্যে দেখতে পাই প্রাণশক্তি অবলীলাক্রমে আপন নানায়তন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ওজন প্রতিনিয়ত বিশেষ মহিমার সঙ্গে বাচিয়ে চলেছে ; তার মধ্যে দেখি যেন মহাদেবের তাগুব, বলদেবের মৃত্য, সে অঙ্গরীর নাচ নয়। একেই তুলনা করা যায় সেই আধুনিক কাব্যরীতির সঙ্গে, গদ্যের সঙ্গে যার বাহ রূপ মেলে আর পদ্যের সঙ্গে আন্তর রূপ। সঞ্জীবচন্দ্র তার ‘পালামেী’ গ্রন্থে কোল নারীদের নাচের বর্ণনা করেছেন। নৃতত্ত্বে যেমন করে বিবরণ লেখা হয় এ তা নয়, লেখক ইচ্ছা করেছেন নাচের রূপটা রসটা পাঠকদের সামনে ধরতে। তাই এ লেখায় ছন্দের ভঙ্গি এসে পৌচেছে অথচ কোনো বিশেষ ছন্দের কাঠামো নেই। এর গদ্য সমমাত্রায় বিভক্ত নয়, কিন্তু শিল্পপ্রচেষ্টা আছে এর গতির মধ্যে । গদ্যসাহিত্যে এই-যে বিচিত্র মাত্রার ছন্দ মাঝে মাঝে উচ্ছ্বলিত হয়, সংস্কৃত বিশেষত প্রাকৃত আর্য প্রভৃতি ছন্দে তার তুলনা মেলে। সে-সকল ছন্দে সমান পদক্ষেপের নৃত্য নেই, বিচিত্রপরিমাণ ধ্বনিপুর কানকে আঘাত করতে থাকে। যজুর্বেদের গদ্যমন্ত্রের ছন্দকে ছন্দ বলেই গণ্য করা হয়েছে । তার থেকে দেখা যায়, প্রাচীনকালেও ছন্দের মূলতত্ত্বটি গদ্যে পদ্যে উভয়ত্রই স্বীকৃত। অর্থাৎ, যে পদবিভাগ বাণীকে কেবল অর্থ দেবার জন্তে লয়, তাকে গতি দেবার জন্তে, তা সমমাত্রায় না হলেও তাতে ছন্দের স্বভাব থেকে যায় । পদ্যছন্দের প্রধান লক্ষণ পঙক্তিসীমানায় বিভক্ত তার কাঠামো । নির্দিষ্টসংখ্যক ধ্বনিগুচ্ছে এক-একটি পঙক্তি সম্পূর্ণ। সেই পঙক্তিশেষে একটি করে বড়ো ৰতি। বলা বাহুল্য, গন্তে এই নিয়মের শাসন নেই। গন্তে বাক্য যেখানে আপন অর্থ সম্পূর্ণ