পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88૨ রবীন্দ্র-রচনাবলী মহাভারতের কথা অমৃতসমান, কাশীরাম দাস কহে শুনে পুণ্যবান। উচ্চারণ-অনুসারে ‘মহাভারতের কথা’ লিখতে হয় ‘মহাভারতের্কথা’, তেমনি "কাশীরাম দাস কহে লেখা উচিত “কাশীরাম দাস্কহে । কারণ, হসন্ত শব্দ পরবর্তী স্বর বা ব্যঞ্জন শব্দের সঙ্গে মিলে যায়, মাঝখানে কোনো স্বরবর্ণ তাদের ঠোকাঠুকি নিবারণ করে না । কিন্তু, বাঙালি বরাবর সহজেই ‘মহাভারতে-কথা’ পড়ে এসেছে, অর্থাৎ ‘তে’র এ-কারকে দীর্ঘ করে আপলে মীমাংসা করে দিয়েছে। তার পরে পুণ্যবান কথাটার পুণ্যের মাত্রা কমিয়ে দিতে সংকোচ করে নি, অথচ বান কথাটার আক্ষরিক দুই মাত্রাকে টান এবং যতির সাহায্যে চার মাত্রা করেছে । ৪ । নিভৃত প্রাণের দেবতা – এই গানের ছন্দ তুমি কী নিয়মে পড় আমি ঠিক বুঝতে পারছি নে। দেবতা' শব্দের পরে একটা দীর্ঘ যতি আছে, সেটা কি রাখ না । যদি সেই যতিকে মান্ত করে থাক তা হলে দেখবে, "দেবতা’ এবং ‘খোলো দ্বার’ মাত্রায় অসমান হয় নি । এ-সব ধ্বনিগত তর্ক মোকাবিলায় মীমাংসা করাই সহজ । লিখিত বাক্যের দ্বারা এর শেষ সিদ্ধাস্তে পৌছনো সম্ভব হবে কি না জানি নে। ছাপাখানা-শাসিত সাহিত্যে ছন্দোবিলাসী কবির এই এক মুশকিল— নিজের কণ্ঠ স্তব্ধ, পরের কণ্ঠের করুণার উপর নির্ভর। সেইজন্তেই আমাকে সম্প্রতি এমন কথা শুনতে হচ্ছে যে, আমি ছন্দ ভেঙে থাকি, তোমাদের স্তুতিবাক্যের কল্পোলে সেটা আমার কানে ওঠে না। তখন আকাশের দিকে চেয়ে বলি, ‘চতুরানন, কোন কণনওয়ালাদের পরে এর বিচারের ভার।’ ৫ । “আজি গন্ধবিধুর সমীরণে— কবিতাটি সহজ নিয়মেই পড়া উচিত। অবশু, এর পঠিত ছন্দে ও গীতছন্দে প্রভেদ আছে। ৬ । ‘জনগণমন-অধিনায়ক’ গানটায় যে মাত্ৰাধিক্যের কথা বলেছ সেটা অন্যায় বল নি। ওই বাহুল্যের জন্যে ‘পঞ্জাব’ শব্দের প্রথম সিলেবলটাকে দ্বিতীয় পদের গেটের বাইরে দাড় করিয়ে রাখি— পন । জাব সিন্ধু গুজরাট মরাঠা ইত্যাদি। ‘পঞ্জাব’কে ‘পঞ্জব করে নামটার আকার খর্ব করতে সাহস হয় নি, ওটা দীর্ঘকায়াদের দেশ। ছন্দের অতিরিক্ত অংশের জন্তে একটু তফাতে আসন পেতে দেওয়া রীতি বা গীতি-বিরুদ্ধ নয় । এই গেল আমার কৈফিয়তের পালা ।