পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8રજ রবীন্দ্র-রচনাবলী শিল্পসমৃদ্ধ ব্যজলিকার আন্দোলনে এই ভোজের মধ্যে আমরাবতীর মৃদুমন্দ হাওয়ার আভাস এনে দিচ্ছেন। নিজের রচনা নিয়ে অহংকার করছি মনে করে আমাকে হঠাৎ সন্ধপদেশ দিতে বোলো না । আমি যে কীর্তিটা করেছি তার মূল্য নিয়ে কথা হচ্ছে না, তার যেটি আদর্শ, এই চিঠিতে তারই আলোচনা চলছে। বক্ষ্যমাণ কাব্যে গষ্ঠটি মাংসপেশল পুরুষ বলেই কিছু প্রাধান্ত যদি নিয়ে থাকে তবু তার কলাবতী বধু দরজার আধখোলা অবকাশ দিয়ে উকি মারছে, তার সেই ছায়াবৃত কটাক্ষ-সহযোগে সমস্ত দৃগুটি রসিকদের উপভোগ্য হবে বলেই ভরসা করেছিলুম। এর মধ্যে ছন্দ নেই বললে অত্যুক্তি হবে, ছন্দ আছে বললেও সেটাকে বলব স্পী। তবে কী বললে ঠিক হবে ব্যাখ্যা করি। ব্যাখ্যা করব কাব্যরস দিয়েই । বিবাহসভায় চন্দনচর্চিত বর-কনে টোপর মাথায় আলপনা-আঁকা পিড়ির উপর বলেছে। পুরুত পড়ে চলেছে মন্ত্র, ও দিকে আকাশ থেকে আসছে সাহানা-রাগিণীতে সানাইয়ের সংগীত । এমন অবস্থায় উভয়ের যে বিবাহ চলেছে সেটা লিঃসন্দিগ্ধ, স্বম্পন্ত । নিশ্চিত-ছন্দ-ওয়ালা কাব্যে সেই সানাই বাজনা সেই মন্ত্রপড়া লেগেই আছে। তার সঙ্গে আছে লাল চেলি, বেনারসির জোড়, ফুলের মালা, ঝাড়লন্ঠনের রোশনাই । সাধারণত ষাকে কাব্য বলি সেটা হচ্ছে বচন-অনির্বচনের সপ্তমিলনের পরিভৃষিত উৎসব। অনুষ্ঠানে যা যা দরকার সযত্বে তা সংগ্রহ করা হয়েছে। কিন্তু, তার পরে ? অকুষ্ঠান তো বারোমাস চলবে না। তাই বলেই তো নীরবিত সাহান-সংগীতের সঙ্গে সঙ্গেই বরবধূর মহাশূন্তে অন্তৰ্ধান কেউ প্রত্যাশ করে না। বিবাহ-অনুষ্ঠানটা সমাপ্ত হল, কিন্তু বিবাহটা তো রইল, যদি না কোনো মানসিক বা সামাজিক উপনিপাত ঘটে । এখন থেকে সাহানা-রাগিণীটা অশ্রুত বাজবে, এমন-কি, মাঝে মাঝে তার সঙ্গে বেস্বরে নিখাদে অত্যন্তশ্রুত কড়া স্বরও না-মেশা অস্বাভাবিক, স্বতরাং একেবারে না-মেশা প্রার্থনীয় নয় । চেলি-বেনারগিটা তোলা রইল, আবার কোনো অনুষ্ঠানের দিনে কাজে লাগবে। সপ্তপদীর বা চতুর্দশপদীর পদক্ষেপট প্রতিদিন মানায় না। তাই বলেই প্রাত্যহিক পদক্ষেপটা অস্থানে পড়ে বিপদজনক হবেই এমন আশঙ্কা করি নে। এমন কি বাম দিক থেকে রুহুবুহু মলের আওয়াজ গোলমালের মধ্যেও কানে আসে। তবু মোটের উপর বেশভূষাট হল আটপৌরে। অহুষ্ঠানের বাধারীতি থেকে ছাড়া পেয়ে একটা স্ববিধে হল এই যে, উভয়ের মিলনের মধ্যে দিয়ে সংসারধাত্রার বৈচিত্র্য সহজ রূপ নিয়ে স্কুল স্বল্প নানা ভাবে দেখা দিতে লাগল। যুগলমিলন নেই অথচ সংসারযাত্রা আছে এমনও ঘটে। কিন্তু, সেটা লক্ষ্মীছাড়া । ৰেন খবুরে-কাগজি সাহিত্য। কিন্তু, ষে সংসারটা প্রতিদিনের, অথচ সেই প্রতিদিনকেই লক্ষ্মীঐ চিরদিনের করে তুলছে, যাকে