পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অচলায়তন Wo: দ্বিতীয় শোণপাংশু। আর বলতে হবে না দাদ। কিন্তু দশ দিকে তো আমরা এ-সব রঙ গন্ধ দেখতে পাই নে । পঞ্চক। দেখতে পেলে তো দেখাই যেত। যে ঘোর মূর্থ সেও দেখত। এ-সব কেবল পুথিতে পড়তে পাওয়া যায়, জগতে কোথাও দেখবার জো নেই। প্রথম শোণপাংশু। তা হলে দাদা তুমি পুথিই পড়ে, আমরা চললুম। দ্বিতীয় শোণপাংশু। এদের মতো চোখকান বুজে যদি আমাদের বসে বসে ভাবতে হত তা হলে তো আমরা পাগল হয়ে যেতুম। তৃতীয় শোণপাংশু। চল ভাই, ঘুরে আসি, শিকারের সন্ধান পেয়েছি। নদীর ধারে গণ্ডারের পায়ের চিহ্ন দেখা গেছে । [ প্রস্থান পঞ্চক। এই শোণপাংশুগুলো বাইরে থাকে বটে, কিন্তু দিনরাত্রি এমনি পাক খেয়ে বেড়ায় যে, বাহিরটাকে দেখতেই পায় না। এরা যেখানে থাকে সেখানে একেবারে অস্থিরতার চোটে চতুর্দিক ঘুলিয়ে যায়। এরা একটু থেমেছে অমনি সমস্ত আকাশটা যেন গান গেয়ে উঠেছে। এই শোণপাংশুদের দেখছি ওরা চুপ করলেই আর কিছু শুনতে পায় না— ওরা নিজের গোলমালটা শোনে সেইজন্যে এত গোল করতে ভালোবাসে। কিন্তু এই আলোতে ভরা নীল আকাশটা আমার রক্তের ভিতরে গিয়ে কথা কচ্ছে, আমার সমস্ত শরীরটা গুন গুন করে বেড়াচ্ছে। গান ঘরেতে ভ্রমর এলো গুনগুনিয়ে। অামারে কার কথা সে যায় শুনিয়ে । আলোতে কোন গগনে মাধবী জাগল বনে, এলো সেই ফুল জাগানোর খবর নিয়ে । সারাদিন সেই কথা সে যায় শুনিয়ে । কেমনে রহি ঘরে, মন যে কেমন করে, কেমনে কাটে যে দিন দিন গুনিয়ে । কী মায়া দেয় বুলায়ে ; দিল সব কাজ ভুলায়ে, বেলা যায় গানের স্বরে জাল বুনিয়ে। অামারে কার কথা সে যায় শুনিয়ে ।