পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\ల్సి ఉ রবীন্দ্র-রচনাবলী প্রহরী। ত৷ নইলে তিনি ঠিক তোমার এই খোলা জানলাটার সামনেই অতবড়ো একটা সোনালি রঙের নিশেন উড়িয়ে ডাকঘর খুলতে যাবেন কেন ?– ছেলেটাকে আমার বেশ লাগছে । অমল। আচ্ছা, রাজার কাছ থেকে আমার চিঠি এলে আমাকে কে এনে দেবে ? প্রহরী। রাজার যে অনেক ডাক-হরকরা আছে– দেখ নি বুকে গোল গোল সোনার তকমা পরে তার ঘুরে বেড়ায়। অমল । আচ্ছা, কোথায় তারা ঘোরে ? প্রহরী। ঘরে ঘরে, দেশে দেশে – এর প্রশ্ন শুনলে হাসি পায় । অমল। বড়ো হলে আমি রাজার ডাক-হরকরা হব । প্রহরী। হা হা হা হা! ডাক-হরকরা ! সে ভারি মস্ত কাজ ! রোদ নেই বৃষ্টি নেই, গরিব নেই বড়োমানুষ নেই, সকলের ঘরে ঘরে চিঠি বিলি করে 'বেড়ানো— সে খুব জবর কাজ ! অমল। তুমি হাসছ কেন ! আমার ঐ কাজটাই সকলের চেয়ে ভালো লাগছে। না না তোমার কাজও খুব ভালো— দুপুরবেলা যখন রোদ্দুর ঝাবী করে, তখন ঘণ্টা বাজে ঢং ঢং ঢং– আবার এক-এক দিন রাত্রে হঠাৎ বিছানায় জেগে উঠে দেখি ঘরের প্রদীপ নিবে গেছে, বাইরের কোন অন্ধকারের ভিতর দিয়ে ঘণ্টা বাজছে টং টং টং। প্রহরী। ঐ যে মোড়ল আসছে— আমি এবার পালাই । ও যদি দেখতে পায় তোমার সঙ্গে গল্প করছি, তা হলেই মুশকিল বাধাবে । অমল। কই মোড়ল, কই, কই ? প্রহরী। ঐ যে, অনেক দূরে। মাথায় একটা মস্ত গোলপাতার ছাতি। অমল । ওকে বুঝি রাজা মোড়ল করে দিয়েছে ? প্রহরী। অারে না। ও আপনি মোড়লি করে। যে ওকে না মানতে চায় ও তার সঙ্গে দিনরাত এমনি লাগে যে ওকে সকলেই ভয় করে । কেবল সকলের সঙ্গে শত্রুতা করেই ও আপনার ব্যাবসা চালায়। আজ তবে যাই, আমার কাজ কামাই যাচ্ছে । আমি আবার কাল সকালে এসে তোমাকে সমস্ত শহরের খবর শুনিয়ে যাব । [ প্রস্থান অমল। রাজার কাছ থেকে রোজ একটা করে চিঠি যদি পাই তা হলে বেশ হয়— এই জানলার কাছে বসে বসে পড়ি। কিন্তু আমি তো পড়তে পারি নে ! কে পড়ে দেবে ? পিসিমা তো রামায়ণ পড়ে। পিসিমা কি রাজার লেখা পড়তে পারে ? কেউ যদি পড়তে না পারে জমিয়ে রেখে দেব, আমি বড়ো হলে পড়ব । কিন্তু ডাক-হরকরা যদি আমাকে না চেনে ! মোড়লমশায়, ও মোড়লমশায়— একটা কথা শুনে যাও ।