পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

తీsy রবীন্দ্র-রচনাবলী ঠাকুরদা। তবে তো বড়ো মুশকিল দেখছি । অমল। বলেছিল, সে আমার টুকটুকে বউ হবে— তার নাকে নোলক, তার লাল ডুরে শাড়ি। সে সকালবেলা নিজের হাতে কালে গোরু দুইয়ে নতুন মাটির ভাড়ে আমাকে ফেনাস্বদ্ধ দুধ খাওয়াবে, আর সদ্ধের সময় গোয়ালম্বরে প্রদীপ দেখিয়ে এসে আমার কাছে বসে সাত ভাই চম্পার গল্প করবে। ঠাকুরদা। বা, বা, খাসা বউ তো ! আমি যে ফকির মানুষ আমারই লোভ হয়। তা বাবা, ভয় নেই, এবারকার মতো বিয়ে দিক-না, আমি তোমাকে বলছি, তোমার দরকার হলে কোনোদিন ওর ঘরে বোনঝির অভাব হবে না । মাধব দত্ত। যাও, যাও । আর তো পারা যায় না। [ প্রস্থান অমল। ফকির, পিসেমশাই তো গিয়েছেন– এইবার আমাকে চুপিচুপি বলো-না ডাকঘরে কি আমার নামে রাজার চিঠি এসেছে। Q ঠাকুরদা। শুনেছি তো তার চিঠি রওনা হয়ে বেরিয়েছে। সে-চিঠি এখন পথে আছে । অমল। পথে ? কোন পথে ! সেই যে বৃষ্টি হয়ে আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেলে অনেক দূরে দেখা যায়, সেই ঘন বনের পথে ? ঠাকুরদা। তবে তো তুমি সব জান দেখছি, সেই পথেই তো । অমল। আমি সব জানি ফকির ! ঠাকুরদা। তাই তো দেখতে পাচ্ছি— কেমন করে জানলে ? অমল । তা আমি জানি নে। আমি যেন চোখের সামনে দেখতে পাই— মনে হয় যেন আমি অনেকবার দেখেছি— সে অনেকদিন আগে— কতদিন তা মনে পড়ে না। বলব ? আমি দেখতে পাচ্ছি, রাজার ডাক-হরকরা পাহাড়ের উপর থেকে একলা কেবলই নেমে আসছে— বঁ হাতে তার লণ্ঠন, কাধে তার চিঠির থলি। কত দিন কত রাত ধরে সে কেবলই নেমে আসছে। পাহাড়ের পায়ের কাছে ঝরনার পথ যেখানে ফুরিয়েছে সেখানে বঁাকা নদীর পথ ধরে সে কেবলই চলে আসছে— নদীর ধারে জোয়ারির খেত, তারই সরু গলির ভিতর দিয়ে দিয়ে সে কেবল আসছে— তার পরে আখের খেত— সেই আখের খেতের পাশ দিয়ে উচু আল চলে গিয়েছে, সেই অালের উপর দিয়ে সে কেবলই চলে আসছে— রাতদিন একলাটি চলে আসছে ; খেতের মধ্যে ঝিঝি পোকা ডাকছে— নদীর ধারে একটিও মানুষ নেই, কেবল কাদাখোচা লেজ দুলিয়ে দুলিয়ে বেড়াচ্ছে — আমি সমস্ত দেখতে পাচ্ছি। যতই সে আসছে দেখছি, আমার বুকের ভিতরে ভারি খুশি হয়ে হয়ে উঠছে।