পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8. রবীন্দ্র-রচনাবলী অমল । ওকে যে আমি শোনাই কোথায় কী আছে। বেচারা দেখতে পায় না। তুমি ষে-সব দেশের কথা আমাকে বল সে-সব আমি ওকে শুনিয়ে দিই। তুমি সেদিন আমাকে সেই ষে হালকা দেশের কথা বলেছিলে, যেখানে কোনো জিনিসের কোনো ভার নেই– যেখানে একটু লাফ দিলেই অমনি পাহাড় ডিঙিয়ে চলে যাওয়া যায়, সেই হালকা দেশের কথা শুনে ও ভারি খুশি হয়ে উঠেছিল। আচ্ছা ফকির, সে দেশে কোন দিক দিয়ে যাওয়া যায় ? ঠাকুরদা। ভিতরের দিক দিয়ে সে একটা রাস্ত আছে, সে হয়তো খুজে পাওয়া শক্ত। অমল । ও বেচারা যে অন্ধ, ও হয়তো দেখতেই পাবে না— ওকে কেবল ভিক্ষাই করে বেড়াতে হবে। তাই নিয়ে ও দুঃখ করছিল— আমি ওকে বললুম ভিক্ষণ করতে গিয়ে তুমি যে কত বেড়াতে পাও, সবাই তো সে পায় না। ঠাকুরদা। বাবা, ঘরে বসে থাকলেই বা এত কিসের দুঃখ ? অমল । না, না, দুঃখ নেই। প্রথমে যখন আমাকে ঘরের মধ্যে বসিয়ে রেখে দিয়েছিল আমার মনে হয়েছিল যেন দিন ফুরোচ্ছে না, আমাদের রাজার ডাকঘর দেখে অবধি এখন আমার রোজই ভালো লাগে— এই ঘরের মধ্যে বসে বসেই ভালো লাগে– একদিন আমার চিঠি এসে পৌছোবে, সে কথা মনে করলেই আমি খুব খুশি হয়ে চুপ করে বসে থাকতে পারি। কিন্তু রাজার চিঠিতে কী যে লেখা থাকবে তা তো আমি জানি নে । ঠাকুরদা। তা না-ই জানলে । তোমার নামটি তো লেখা থাকবে— তা হলেই হল। মাধব দত্তের প্রবেশ মাধব দত্ত। তোমরা দুজনে মিলে এ কী ফেসাদ বাধিয়ে বসে আছে বলে দেখি ? ঠাকুরদা। কেন হয়েছে কী ? মাধব দত্ত। শুনছি, তোমরা নাকি রটিয়েছ, রাজা তোমাদেরই চিঠি লিখবেন বলে ডাকঘর বসিয়েছেন । ঠাকুরদা। তাতে হয়েছে কী ? মাধব দত্ত। আমাদের পঞ্চানন মোড়ল সেই কথাটি রাজার কাছে লাগিয়ে বেনামি চিঠি লিখে দিয়েছে। ঠাকুরদা। সকল কথাই রাজার কানে ওঠে, সে কি আমরা জানি নে ? মাধব দত্ত। তবে সামলে চল না কেন । রাজাবাদশার নাম করে আমন যা-তা কথা মুখে আনো কেন ? তোমরা যে আমাকে স্বদ্ধ মুশকিলে ফেলবে।