পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী باده পরদিনই শৰ্মিলা চলে গেল কলকাতায়, উঠল গিয়ে মথুরদাদার বাড়িতে। অভিমান করে বললে, “একদিনও তো বোনের খবর নাও না।” মেয়ে-প্রতিদ্বন্দ্বী হলে বলত, ‘তুমিও তো নাও না । পুরুষের মাথায় সে জবাব জোগাল না। অপরাধ মেনে নিলে । বললে, “নিশ্বাস ফেলবার কি সময় আছে। নিজে আছি কিনা তাই ভুল হয়ে যায়। আর, তা ছাড়া তোমরাও তো দূরে দূরে বেড়াও।” শৰ্মিলা বললে, “কাগজে দেখলুম ময়ুরভঞ্জ না মথুরগঞ্জ কোথায় একটা ব্রিজ তৈরির কাজ পেয়েছ। পড়ে এত খুশি হলুম। তখনই মনে হল মথুরদাদাকে নিজে গিয়ে কনগ্র্যাচুলেট করে আসি।” “একটু সবুর কোরো খুকি। এখনো সময় হয় নি।” ব্যাপারখানা এই : নগদ টাকা ফেলার দরকার। মাড়োয়ারি ধনীর সঙ্গে ভাগে কাজ করার কথা । শেষকালে প্রকাশ হল যে-রকম শর্ত তাতে শাসের ভাগটাই মাড়োয়ারির আর ছিবড়ের ভাগটাই পড়বে ওর কপালে। তাই পিছোবার চেষ্টা । শৰ্মিলা ব্যস্ত হয়ে উঠে বললে, “এ কখনো হতেই পারে না। ভাগে কাজ করতে যদি হয় আমাদের সঙ্গে করে। এমন কাজটা তোমার হাত থেকে ফসকে গেলে ভারি অন্যায় হবে। আমি থাকতে এ হতেই দেব না, যাই বল তুমি।” এর পরে লেখাপড়া হতেও দেরি হল না ; মথুরদাদার হৃদয়ও বিগলিত হল। ব্যাবসা চলল বেগে । এর আগে চাকরির দায়িত্বে শশাঙ্ক কাজ করেছে, সে দায়িত্বের সীমা ছিল পরিমিত । মনিব ছিল নিজের বাইরে, দাবি এবং দেয় সমান সমান ওজন মিলিয়ে চলত। এখন নিজেরই প্রভুত্ব নিজেকে চালায়। দাবি এবং দেয় এক জায়গায় মিলে গেছে। দিনগুলো ছুটিতে কাজেতে জাল-বোন নয়, সময়টা হয়েছে নিরেট। যে দায়িত্ব ওর মনের উপর চেপে সেটাকে ইচ্ছে করলেই ত্যাগ করা যায় বলেই তার জোর এত কড়া। আর কিছু নয়, স্ত্রীর ঋণ শুধতেই হবে, তার পরে ধীরেস্থস্থে চলবার সময় পাওয়া যাবে। বঁ হাতের কজিতে ঘড়ি, মাথায় সোলার টুপি, আস্তিন গোটানো, খাকির প্যান্ট পরা, চামড়ার কোমরবন্ধ অঁাটা, মোটা-স্বকৃতলাওজালা জুতো, চোখে রোদ বঁাচাবার রঙিন চশমা— শশাঙ্ক উঠেপড়ে লেগে গেল কাজে । স্ত্রীর ঋণ যখন শোধ হবার কিনারায় এল তখনো ইক্টিমের দম কমায় না, মনটা তখন উঠেছে গরম হয়ে । ইতিপূর্বে সংসারে আয়ব্যয়ের ধারাটা বইত একই খাদে, এখন হল দুই শাখা।