পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ર• রবীন্দ্র-রচনাবলী সর্বদাই গরম রাখতে হয়, কখন স্বামী হঠাৎ অসময়ে বলে বসে, চললুম, ফিরতে দেরি হবে।’ মোটরগাড়িতে গোছানো থাকে সোডাওআটার এবং ছোটো টিনের বাক্সে শুকনোজাতের খাবার। একটা ওডিকোলনের শিশি বিশেষ দৃষ্টিগোচরক্ষপেই রাখা থাকে, যদি মাথা ধরে। গাড়ি ফিরে এলে পরীক্ষা করে দেখে কোনোটাই ব্যবহার করা হয় নি। মন খারাপ হয়ে যায়। সাফ কাপড় শোবার ঘরে প্রত্যহই স্বপ্রকাগুভাবে ভঁাজ করা, তৎসত্ত্বেও অন্তত সপ্তাহে চার দিন কাপড় ছাড়বার অবকাশ থাকে না । ঘরকন্নার পরামর্শ খুবই খাটাে করে আনতে হয়েছে, জরুরি টেলিগ্রামের ঠোকর-মার। ভাষার ধরনে, সেও চলতে চলতে, পিছু ডাকতে ডাকতে, বলতে বলতে ‘ওগো শুনে যাও কথাটা’ । ওদের ব্যাবসার মধ্যে শর্মিলার যে একটুখানি যোগ ছিল তাও গেল কেটে, ওর টাকাটা এসেছে স্বদে আসলে শোধ হয়ে । সুদও দিয়েছে মাপজোখ-করা হিসেবে, দস্তুরমত রসিদ নিয়ে। শৰ্মিলা বলে, ‘বাস রে, ভালোবাসাতেও পুরুষ আপনাকে সবটা মেলাতে পারে না। একটা জায়গা ফাক রাখে, সেইখানটাতে ওদের পৌরুষের অভিমান ।” লাভের টাকা থেকে শশাঙ্ক মনের মতো বাড়ি খাড়া করেছে ভবানীপুরে । ওর শখের জিনিস। স্বাস্থ্য আরাম শৃঙ্খলার নতুন নতুন প্ল্যান আসছে মাথায়। শৰ্মিলাকে আশ্চর্য করবার চেষ্টা । শৰ্মিলাও বিধিমত আশ্চর্য হতে ক্রটি করে না । এঞ্জিনিয়ার একটা কাপড়-কাচ কলের পত্তন করেছে, শৰ্মিল সেটাকে ঘুরে ফিরে দেখে খুব তারিফ করলে। মনে মনে বললে, “কাপড় আজও যেমন ধোবার বাড়ি যাচ্ছে কালও তেমনি যাবে। ময়লা কাপড়ের গর্দভবাহনকে বুঝে নিয়েছি, তার বিজ্ঞানবাহনকে বুঝি নে। আলুর খোসা ছাড়াবার যন্ত্রটা দেখে তাক লেগে গেল, বললে, আলুর দম তৈরি করবার বারো-আনা দুঃখ যাবে কেটে। পরে শোনা গেছে সেটা ফুটো ডেকচি ভাঙা কাৎলি প্রভৃতির সঙ্গে এক বিস্মৃতিশয্যায় নৈষ্কর্ম্য লাভ করেছে। বাড়িটা যখন শেষ হয়ে গেল তখন এই স্থাবর পদার্থটার প্রতি শৰ্মিলার রুদ্ধ স্নেহের উদ্যম ছাড়া পেলে । সুবিধা এই যে, ইটকাঠের দেহটাতে ধৈর্য অটল। গোছানোগাছানো সাজানো-গোজানোর মহোদ্যমে দুই-দুইজন বেহার হাপিয়ে উঠল, একজন দিয়ে গেল জবাব। ঘরগুলোর গৃহসজ্জা চলছে শশাঙ্ককে লক্ষ্য করে। বৈঠকখানাঘরে সে আজকাল প্রায়ই বসে না, তবু তারই ক্লাস্ত মেরুদণ্ডের উদ্দেশে কুশন নিবেদন করা হচ্ছে নানা ফ্যাশনের ; ফুলদানি একটা-আধটা নয়, টিপায়ে টেবিলে ঝালরওআল। ফুলকাটা আবরণ । শোবার ঘরে দিনের বেলায় শশাঙ্কর সমাগম আজকাল বন্ধ, কেননা তার আধুনিক পঞ্জিকায় রবিবারটা সোমবারেরই যমজ ভাই। অন্ত ছুটিতে