পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঠুই বোন g|లీt মনে মনে কেবলই জপ করে, ‘কী প্রতিভা ! কী তপস্তা ! কী নির্মল চরিত্র ! কী আমার অভাবনীয় সৌভাগ্য ? একটা বিষয়ে নীরদের জিত হয়েছে, সে কথাটাও বলা দরকার। নীরদের সঙ্গে উর্মির বিবাহের সম্বন্ধ হলে শশাঙ্ক এবং সন্দিগ্ধমনা আরো দশজন বিন্দ্রপ করে হেসেছিল। বলেছিল, রাজারামবাবু সাদা লোক, ঠাউরে বসেছেন নীরদ আইডিয়ালিস্ট, । ওর আইডিয়ালিজম যে গোপনে ডিম পাড়ছে উর্মির টাকার থলির মধ্যে, এ কথাটা কি লম্বা লম্বা সাধুবাক্য দিয়ে ঢাকা যায়। আপনাকে স্যাক্রিফাইস করেছে বৈকি, কিন্তু ষে দেবতার কাছে র্তার মন্দিরট ইস্পীরিয়াল ব্যাঙ্কে । আমরা সোজাসুজি শ্বশুরকে জানিয়ে থাকি, টাকার দরকার আছে, আর সে টাকা জলে পড়বে না, তারই মেয়ের সেবায় লাগবে। ইনি মহৎ লোক, বলেন মহৎ উদ্দেশ্বের খাতিরেই বিয়ে করবেন। তার পরে সেই উদ্বেগুটাকে দিনে দিনে তৰ্জমা করবেন শ্বশুরের চেকবইয়ের খাতায় । নীরদ জানত এই-রকম কথাবার্তা অপরিহার্য। উমিকে বললে, “আমার বিয়ে করার একটা শর্ত আছে ; তোমার টাকা থেকে এক পয়সা নেব না, নিজের উপার্জন আমার একমাত্র অবলম্বন হবে।’ শ্বশুর ওকে যুরোপে পাঠাবার প্রস্তাব করেছিলেন, ও কিছুতেই রাজি হল না। সেজন্যে অনেক দিন অপেক্ষা করতেও হল । রাজারামবাবুকে জানিয়েছিল, হাসপাতাল-প্রতিষ্ঠার উপলক্ষে যত টাকা দিতে চান সমস্তই দেবেন আপনার মেয়ের নামে । আমি যখন সেই হাসপাতালের ভার নেব তার থেকে কোনো বৃত্তি নেব না । আমি ডাক্তার, জীবিকার জন্যে আমার ভাবনা নেই।’ এই একান্ত নিস্পৃহতা দেখে ওর পরে রাজারামের ভক্তি দৃঢ় হল, আর উমি খুব গর্ব অনুভব করলে। এই গর্বের স্তায্য কারণ ঘটাতেই শৰ্মিলার মন নীরদের পরে একেবারে বিরূপ হয়ে গেল। বললে, “ইস ! দেখব দেমাক কত দিন টেকে!’ তার পর থেকে নীরদ যখন অভ্যাসমত অত্যন্ত গভীরভাবে কথা কইত শৰ্মিলা আলাপের মাঝখানে হঠাৎ উঠে ঘাড় বাকিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে চলে যেত। কিছু দূর পর্যন্ত শোনা যেত তার পায়ের শব্দ। উমির খাতিরে কিছু বলত না, কিন্তু তার না-বলার ব্যঞ্জনা যথেষ্ট তেজোত্তপ্ত ছিল । প্রথম-প্রথম নীরদ প্রতি মেলে চিঠিপত্রে চার-পাচ পাতা ধরে বিস্তারিত উপদেশ দিয়ে এসেছে। কিছু দিন পরে চমক লাগিয়ে দিলে টেলিগ্রাম । বড়ো অঙ্কের টাকার জরুরি দাবি, অধ্যয়নের প্রয়োজন। ষে গর্ব এত দিন উর্মির প্রধান সম্বল ছিল তাতে ষথেষ্ট ঘা লাগল বটে, কিন্তু মনে একটু সাম্বনাও পেলে । ষত দিন যায় এবং নীরদের অনুপস্থিতি দীর্ঘ হয়ে ওঠে ততই উর্মির পূর্বস্বভাবটা কর্তব্যের বেড়ার মধ্যে