পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8છ8 রবীন্দ্র-রচনাবলী ফাক খুঁজে বেড়ায়। নিজেকে নানা ছলে ফাকিও দেয়, অস্থতাপও করে। এইরকম ! . আত্মপ্লানির সময় নীরদকে অর্থসাহায্য ওর পরিতপ্ত মনের সান্থনাজনক। f উর্মি টেলিগ্রামটা ম্যানেজারের হাতে দিয়ে সসংকোচে বলে, “কাকাবাবু, টাকাট—” ম্যানেজারবাবু বলেন, “ধাধা লাগছে। আমরা তো জানতুম টাকাটা ও পক্ষে অস্পৃশ্য ছিল।” ম্যানেজার নীরদকে পছন্দ করতেন না। উমি বলে, “কিন্তু বিদেশে —” কথাটা শেষ করে না। কাকাবাবু বলেন, “এ দেশের স্বভাব বিদেশের মাটিতে বদলে যেতে পারে সে জানি— কিন্তু আমরা তার সঙ্গে তাল রাখব কী করে।” উমি বলে, “টাকাটা না পেলে হয়তে বিপদে পড়তে পারেন।” o *আচ্ছা বেশ, পাঠাচ্ছি মা, তুমি বেশি ভেবে না। বলে রাখছি এই শুরু হল, কিন্তু এই শেষ নয়।” শেষ যে নয় অনতিকাল পরেই আরো বড়ো অঙ্কে তার প্রমাণ হল । এবার প্রয়োজন স্বাস্থ্যের। ম্যানেজার গম্ভীরমুখে বললেন, “শশাঙ্কবাবুর সঙ্গে পরামর্শ করা ভালো।” উমি শশব্যস্ত হয়ে বললে, “আর যাই কর, দিদিরা এ খবরটা যেন না পান।” “একলা এই দায়িত্ব নিতে ভালো লাগছে না।” *এক দিন তো টাকা তার হাতেই পড়বে।” *পড়বার আগে দেখতে হবে যেন জলে না পড়ে।” “কিন্তু ওঁর স্বাস্থ্যের কথা তো ভাবতে হবে।” “অস্বাস্থ্য নানা জাতের আছে, এটা ঠিক কোন জাতের বুঝে উঠতে পারছি নে। এখানে ফিরে এলে হয়তে হাওয়ার বদলে সুস্থ হতে পারেন। ফিরতি প্যাসেজের ব্যবস্থা করে পাঠানো যাক।” ফেরবার প্রস্তাবে উমি এত যে বেশি বিচলিত হয়ে উঠল, ও নিজে ভাবলে তার কারণ পাছে নীরদের উচ্চ উদ্দেশ্য মাঝখানে বাধা পায় । কাকা বললেন, "এবারকার মতো টাকা পাঠাচ্ছি, কিন্তু মনে হচ্ছে এতে ডাক্তারবাবুর স্বাস্থ্য আরো বিগড়ে যাবে।” রাধাগোবিন্দ উৰ্মির অনতিদূর সম্পর্কের আত্মীয়। কাকার কথাটার ইঙ্গিত ওকে বাজল । সন্দেহ এল মনে । ভাবতে লাগল, "দিদিকে হয়তো বলতে হবে।’ এ দিকে নিজেকে ধাক্কা দিয়ে বার বার প্রশ্ন করছে, “যথোচিত দুঃখ হচ্ছে না কেন।”