পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হই বোন 88} কাছে এই কাজগুলো খেলা, এক-রকম ছুটি, উদ্দেগুবিবজিত উদযোগ। ও যেখানে এত দিন ছিল এ তার থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র জগৎ । এখানে ওর সম্মুখে কোনো লক্ষ্য তর্জনী তুলে নেই; অথচ দিনগুলো কাজ দিয়ে পূর্ণ, সে কাজ বিচিত্র। ভুল হয়, ক্রটি হয়, তার জন্যে কঠিন জবাবদিহি নেই। যদি বা দিদি একটু তিরস্কার করতে চেষ্ট করে শশাঙ্ক হেসে উড়িয়ে দেয় ; যেন উর্মির ভুলটাতেই বিশেষ একটা রস আছে। বস্তুত আজকাল ওদের ঘরকন্নাতে দায়িত্বের গাম্ভীর্য চলে গেছে ; ভুলচুকে কিছু আসে যায় না এমন একটা আলগা অবস্থা ঘটেছে। এইটেই শশাঙ্কের কাছে ভারি অারামের ও কৌতুকের। মনে হচ্ছে যেন পিকৃনিক চলছে। আর, উমি যে কিছুতেই চিন্তিত নয়, দুঃখিত নয়, লজ্জিত নয়, সব-তাতেই উচ্ছসিত, এতে শশাঙ্কের নিজের মন থেকে তার গুরুভার কর্মের পীড়নকে লঘু করে দেয়। কাজ শেষ হলেই, এমন-কি, না হলেও বাড়িতে ফিরে আসবার জন্তে ওর মন উৎসুক হয়ে ওঠে । এ কথা মানতেই হবে উমি কাজে পটু নয়। তবু একটা জিনিস লক্ষ্য করে দেখা গেল, কাজ দিয়ে না হোক, নিজেকে দিয়েই এ বাড়ির অনেক দিনের মস্ত একটা অভাব পূরণ করেছে— সেই অভাবটা ঠিক যে কী তা নির্দিষ্ট ভাষায় বলা যায় না। তাই, শশাঙ্ক যখন বাড়িতে আসে তখন সেখানকার হাওয়ায় খেলানো একটা ছুটির হিল্লোল অনুভব করে। সেই ছুটি কেবল ঘরের সেবায় নয়, কেবল অবকাশমাত্রে নয়, তার একটা রসময় স্বরূপ আছে। বস্তুত উর্মির নিজের ছুটির আনন্দ এখানকার সমস্ত শূন্তকে পূর্ণ করেছে, দিনরাত্রিকে চঞ্চল করে রেখেছে। সেই নিরস্তর চাঞ্চল্য কর্মক্লাস্ত শশাঙ্কের রক্তকে দোলায়িত করে তোলে। অপর পক্ষে শশাঙ্ক উর্মিকে নিয়ে আনন্দিত, সেই প্রত্যক্ষ উপলব্ধিই উৰ্মিকে আনন্দ দেয়। এত কাল সেই সুখটাই উমি পায় নি। সে যে আপনার অস্তিত্বমাত্র দিয়ে কাউকে খুশি করতে পারে এই তথ্যটি অনেক দিন তার কাছে চাপা পড়ে গিয়েছিল, এতেই তার যথার্থ গৌরবহানি হয়েছিল। শশাঙ্কের খাওয়া-পরা অভ্যাসমত চলছে কি না, ঠিক সময়ে ঠিক জিনিসের জোগান হল কি হল না, সেটা এ বাড়ির প্রভুর মনে গৌণ হয়েছে আজ ; আমনিতেই, অকারণেই আছে প্রসন্ন। শৰ্মিলাকে সে বলে, ‘তুমি খুটিনাটি নিয়ে অত ব্যস্ত হচ্ছ কেন। অভ্যাসের একটু হেরফের হলে তো অস্ববিধে হয় না, সে তে ভালোই লাগে।’ শশাঙ্কের মনটা এখন জোয়ার-ভাটার মাঝখানকার নদীর মতো। কাজের বেগট থমথমে হয়ে এসেছে। একটু কোনো দেরিতেই বা বাধাতেই মুশকিল হবে, লোকসান