পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দুই বোন 883) তার পর কিছুকাল পরে শশাঙ্কর কাছ থেকে উমি একখানি চিঠি পেল। পেয়ে খুব হেসেছে সে। সেই চিঠি আজও তার বাক্সে আছে। আজ খুলে সে আবার পড়লে— কাল তো তুমি চলে গেলে । তোমার স্মৃতি পুরাতন হতে না হতে তোমার নামে একটা কলঙ্ক রটনা হয়েছে, সেটা তোমার কাছে গোপন কর আকর্তব্য মনে করি । আমার পায়ে একজোড়া তালতলীয় চটি অনেকেই লক্ষ করেছে। কিন্তু তার চেয়ে লক্ষ করেছে তার ছিদ্র ভেদ করে আমার চরণনখরপঙক্তি মেঘমুক্ত চন্দ্রমালার মতো । ( ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল দ্রষ্টব্য। উপমার যাথার্থ্য সম্বন্ধে সন্দেহ ঘটলে তোমার দিদির কাছে মীমাংসনীয় । ) আজ সকালে আমার আপিসের বৃন্দাবন নন্দী যখন আমার সপাত্নক চরণ স্পর্শ করে প্রণাম করলে তখন আমার পদমর্যাদায় যে বিদীর্ণতা প্রকাশ পেয়েছে তারই অগৌরব মনে আন্দোলিত হল । সেবককে জিজ্ঞাসা করলেম, মহেশ, আমার সেই অন্য নূতন চটিজোড়াটা গতিলাভ করেছে অন্য কোন অনধিকারীর শ্ৰীচরণে। সে মাথা চুলকিয়ে বললে, ‘ও বাড়ির উর্মিমাসিদের সঙ্গে আপনিও যখন দাৰ্জিলিঙ যান সেই সময়ে চটিজোড়াটাও গিয়েছিল। আপনি ফিরে এসেছেন সেইসঙ্গে ফিরে এসেছে তার একপাটি, আর-এক পাটি— তার মুখ লাল হয়ে উঠল। আমি এক ধমক দিয়ে বললুম, “ব্যস, চুপ । সেখানে অনেক লোক ছিল। চটিজুতো-হরণ হীনকার্য। কিন্তু মানুষের মন দুর্বল, লোভ দুর্দম, এমন কাজ করে ফেলে, ঈশ্বর বোধ করি ক্ষমা করেন। তবু অপহরণ-কাজে বুদ্ধির পরিচয় থাকলে দুষ্কার্ষের গ্লানি অনেকটা কাটে। কিন্তু একপাটি চটি ! ধিক্ ! যে এ কাজ করেছে, যথাসাধ্য তার নাম আমি উহ্ন রেখেছি। সে যদি তার স্বভাবসিদ্ধ মুখরতার সঙ্গে এই নিয়ে অনর্থক চেঁচামেচি করে তা হলে কথাটা ঘাটাঘাটি হয়ে যাবে। চটি নিয়ে চটাচটি সেইখানেই খাটে যেখানে মন খাটি। মহেশের মতো নিন্দুকের মুখ বন্ধ এখনই করতে পার একজোড়া শিল্পকার্যখচিত চটির সাহায্যে। যেমন তার আম্পর্ধা ! পায়ের মাপ এইসঙ্গে পাঠাচ্ছি । চিঠিখান পেয়ে উমি স্মিতমুখে পশমের জুতো বুনতে বসেছিল, কিন্তু শেষ করে নি। পশমের কাজে আর তার উৎসাহ ছিল না। আজ এটা আবিষ্কার করে স্থির করলে এই অসমাপ্ত জুতোটাই দেবে শশাঙ্ককে সেই দাৰ্জিলিঙযাত্রার সাম্বৎসরিক দিনে। সেদিন আর কয়েক সপ্তাহ পরেই আসছে। গভীর একটা দীর্ঘনিশ্বাস পড়ল— হায় রে কোথায় 孤ー>>|ミみ