পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্থই বোন 8૯૧ উচ্চহান্তসংযুক্ত সংক্ষিপ্ত আপত্তি নিফল হয় নি। নৃতন সংস্করণের কেশোৰগমের সঙ্গে সুগন্ধি তৈলের সংযোগসাধন শশাঙ্কর মাথায় এই প্রথম ঘটল । কিন্তু তার পর আজকাল কেশোমতিবিধানের অনাদরেই ধরা পড়ছে অন্তবেদনা। এতটা বেশি যে, এ নিয়ে প্রকাশু বা অপ্রকাশ্ব তীব্ৰ হাসি আর চলে না। শৰ্মিলার উৎকণ্ঠ। তার ক্ষোভকে ছাড়িয়ে গেল। স্বামীর প্রতি করুণায় ও নিজের প্রতি ধিক্কারে তার বুকের মধ্যে টনটন করে উঠছে, রোগের ব্যথাকে দিচ্ছে এগিয়ে। ময়দানে হবে কেল্লার ফৌজদের যুদ্ধের খেলা। শশাঙ্ক ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করতে এল, “যাবে উৰ্মি, দেখতে ? ভালো জায়গা ঠিক করে রেখেছি।” উমি কোনো উত্তর দেবার পূর্বেই শর্মিল বলে উঠল, “যাবে বৈকি। নিশ্চয় যাবে। একটু বাইরে ঘুরে আসবার জন্তে ও যে ছট্‌ফট্‌ করছে।” প্রশ্ৰয় পেয়ে দু দিন না যেতেই জিজ্ঞাসা করলে, “সার্কাস ?” এ প্রস্তাবে উমিমালার উৎসাহই দেখা গেল । তার পরে, “বোটানিকাল গার্ডেন ?” ف كتبه اسة এইটেতে একটু বাধল। দিদিকে ফেলে বেশি ক্ষণ দূরে থাকতে উৰ্মির মন সায় দিচ্ছে না। দিদি স্বয়ং পক্ষ নিল শশাঙ্কর। রাজ্যের রাজমজুরদের সঙ্গে দিনে দুপুরে ঘুরে ঘুরে খেটে খেটে মানুষটা যে হয়রান হল— সারা দিন কেবল খাটছে ধুলোবালির মধ্যে। হাওয়া না খেয়ে এলে শরীর যে পড়বে ভেঙে । এই একই যুক্তি অনুসারে স্টীমারে করে রাজগঞ্জ পর্যন্ত ঘুরে আসা অসংগত হল না। শমিলা মনে মনে বলে, যার জন্তে কাজ খোওয়াতে ওর ভাবনা নেই তাকে স্বদ্ধ খোওয়ানো ওর সইবে না । শশাঙ্ককে স্পষ্ট করে কেউ কিছু বলে নি বটে, কিন্তু চারি দিক থেকেই সে একটা অব্যক্ত সমর্থন পাচ্ছে। শশাঙ্ক এক-রকম ঠিক করে নিয়েছে, শৰ্মিলার মনে বিশেষ কোনো ব্যথা নেই, ওদের দুজনকে একত্র মিলিয়ে খুশি দেখেই সে খুশি । সাধারণ মেয়ের পক্ষে এটা সম্ভব হতে পারত না, কিন্তু শৰ্মিলা যে অসাধারণ। শশাঙ্কর চাকরির আমলে একজন আর্টিস্ট, রঙিন পেনসিল দিয়ে শৰ্মিলার একটা ছবি এঁকেছিল। এত দিন সেটা ছিল পোর্ট ফোলিয়োর মধ্যে। সেইটেকে বের করে বিলিতি দোকানে খুব দামি ফ্যাশানে বঁাধিয়ে নিয়ে আপিস-ঘরে যেখানে বসে ঠিক তার সমুখে দেয়ালে ঝুলিয়ে