পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

82b H রবীন্দ্র-রচনাবলী রাখলে । সামনের ফুলদানিতে রোজ মালী ফুল দিয়ে যায়। অবশেষে এক দিন শশাঙ্ক বাগানে স্থৰ্যমুখী কিরকম ফুটছে দেখাতে দেখাতে হঠাৎ উর্মির হাত চেপে ধরে বললে, “তুমি নিশ্চয় জান, তোমাকে আমি ভালোবাসি। আর, তোমার দিদি, তিনি তো দেবী। তাকে যত ভক্তি করি জীবনে আর-কাউকে তেমন করি নে। তিনি পৃথিবীর মানুষ নন, তিনি আমাদের অনেক উপরে।” এ কথা দিদি বারবার করে উর্মিকে স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছে যে, তার অবর্তমানে সব চেয়ে যেটা সান্ধনার বিষয় সে উৰ্মিকে নিয়েই । এ সংসারে অন্য কোনো মেয়ের আবির্ভাব কল্পনা করতেও দিদিকে বাজত, অথচ শশাঙ্ককে যত্ন করবার জন্তে কোনো মেয়েই থাকবে না এমন লক্ষ্মীছাড়া অবস্থাও দিদি মনে মনে সইতে পারত না। ব্যাবসার কথাও দিদি ওকে বুঝিয়েছে ; বলেছে, যদি ভালোবাসায় বাধা পায় তা হলে সেই ধাক্কায় ওর কাজকর্ম সব যাবে নষ্ট হয়ে । ওর মন যখন তৃপ্ত হবে তখনই আবার কাজকর্মে আপনি আসবে শৃঙ্খলা । & শশাঙ্কের মন উঠেছে মেতে । ও এমন একটা চন্দ্রলোকে আছে যেখানে সংসারের সব দায়িত্ব মুখতন্দ্রায় লীন । আজকাল রবিবার-পালনে বিশুদ্ধ খৃস্টানের মতোই ওর অস্থলিত নিষ্ঠ । একদিন শমিলাকে গিয়ে বললে, “দেখো, পাটের সাহেবদের কাছে তাদের স্ট্রীমলঞ্চ পাওয়া গেছে— কাল রবিবার, মনে করছি ভোরে উর্মিকে নিয়ে ডায়মগু, হারবারের কাছে যাব, সন্ধ্যার আগেই আসব ফিরে ।” শৰ্মিলার বুকের শিরাগুলো কে যেন দিলে মুচড়ে, বেদনায় কপালের চামড়া উঠল কুঞ্চিত হয়ে । শশাঙ্কের চোখেই পড়ল না। শমিলা কেবল একবার জিজ্ঞাসা করলে, “খাওয়াদাওয়ার কী হবে ।” শশাঙ্ক বললে, “হোটেলের সঙ্গে ঠিক করে রেখেছি।” এক দিন এই-সমস্ত ঠিক করবার ভার যখন ছিল শৰ্মিলার উপর তখন শশাঙ্ক ছিল উদাসীন। আজ সমস্ত উলটপালট হয়ে গেল । যেমনি শৰ্মিলা বললে “আচ্ছ, তা যেয়ো” অমনি মুহূর্ত অপেক্ষা না করে শশাঙ্ক বেরিয়ে গেল ছুটে । শৰ্মিলার ডাক ছেড়ে কাদতে ইচ্ছা করল । বালিশের মধ্যে মুখ গুজে বারবার করে বলতে লাগল, “আর কেন অাছি বেঁচে ।” কাল রবিবারে ছিল ওদের বিবাহের সাম্বৎসরিক । আজ পর্যন্ত এ অনুষ্ঠানে কোনো দিন ছেদ পড়ে নি। এবারেও স্বামীকে না বলে, বিছানায় শুয়ে শুয়ে সমস্ত আয়োজন করছিল। আর-কিছুই নয়, বিয়ের দিন শশাঙ্ক ষে লাল বেনারসির জোড় পরেছিল সেইটে ওকে পরাবে, নিজে পরবে বিয়ের চেলি। স্বামীর গলায়