পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী س۹b 8 এটা আমাদের স্মরণ নেই যে, ষোগাসনে যা পরম সম্মানাহঁ সমাজের মধ্যে তা বর্বরতা। প্রাণ না থাকলে দেহ যেমন অপবিত্র, ভাব না থাকলে বাহাকুষ্ঠানও তদ্রুপ । তোমার-আমার মতো লোক যারা তপস্তাও করি নে, হবিন্যও খাই নে, জুতোমোজা পরে ট্র্যামে চড়ে পান চিবোতে চিবোতে নিয়মিত আপিসে ইস্কুলে যাই; যাদের আদ্যোপাস্ত তন্ন তন্ন করে দেখে কিছুতেই প্রতীতি হয় না এর দ্বিতীয় যাজ্ঞবল্ক্য বশিষ্ঠ গৌতম জরৎকার বৈশম্পায়ন কিম্বা ভগবান কৃষ্ণদ্বৈপায়ন, ছাত্রবৃন্দ— যাদের বালখিল্য তপস্বী বলে এ-পর্যন্ত কারে ভ্রম হয় নি, একদিন তিন সন্ধ্যা স্বান করে একটা হরীতকী মুখে দিলে যাদের তার পরে একাদিক্রমে কিছুকাল আপিস কিম্বা কলেজ কামাই করা অত্যাবগুক হয়ে পড়ে, তাদের পক্ষে এ-রকম ব্রহ্মচর্যের বাহাড়ম্বর করা, পৃথিবীর অধিকাংশ উদযোগপরায়ণ মান্তজাতীয়ের প্রতি খর্ব নাসিক সীটুকার করা, কেবলমাত্র যে অদ্ভুত, অসংগত, হাস্যকর তা নয়, কিন্তু সম্পূর্ণ ক্ষতিজনক । বিশেষ কাজের বিশেষ ব্যবস্থা আছে। পালোয়ান লেংটি পরে, মাটি মেখে ছাতি ফুলিয়ে চলে বেড়ায়, রাস্তার লোক বাহবা-বাহবা করে— তার ছেলেটি নিতান্ত কাহিল এবং বেচার, এবং এনট্রেন্স, পর্যন্ত পড়ে আজ পাঁচ বৎসর বেঙ্গল সেক্রেটারিয়েট আপিসের অ্যাপ্রেন্টিস, সেও যদি লেংটি পরে, ধুলো মাখে এবং উঠতে বসতে তাল ঠোকে এবং ভদ্রলোক কারণ জিজ্ঞাসা করলে বলে আমার বাবা পালোয়ান’, তবে অন্য লোকের ধেমনি আমোদ বোধ হোক, আত্মীয়বন্ধুরা তার জন্তে সবিশেষ উদবিগ্ন না হয়ে থাকতে পারে না। অতএব হয় সত্যই তপস্যা করে নয় তপস্যার আড়ম্বর ছাড়ো। পুরাকালে ব্রাহ্মণের একটি বিশেষ সম্প্রদায় ছিলেন, তাদের প্রতি একটি বিশেষ কার্যভার ছিল। সেই কার্যের বিশেষ উপযোগী হবার জন্যে র্তারা আপনাদের চারি দিকে কতকগুলি আচরণ-অনুষ্ঠানের সীমারেখা অঙ্কিত করেছিলেন । অত্যন্ত সতর্কতার সহিত র্তার। আপনার চিত্তকে সেই সীমার বাহিরে বিক্ষিপ্ত হতে দিতেন না। সকল কাজেরই এইরূপ একটা উপযোগী সীমা আছে যা অন্ত কাজের পক্ষে বাধামাত্র। ময়রার দোকানের মধ্যে অ্যাটনি নিজের ব্যবসায় চালাতে গেলে সহস্র বিক্সের দ্বারা প্রতিহত না হয়ে থাকতে পারেন না এবং ভূতপূর্ব অ্যাটনির আপিসে যদি বিশেষ কারণ-বশত ময়রার দোকান খুলতে হয় তা হলে কি চৌকিটেবিল কাগজপত্র এবং স্তরে স্তরে স্থসজ্জিত ল-রিপোর্টের প্রতি মমতা প্রকাশ করলে চলে। বর্তমান কালে ব্রাহ্মণের সেই বিশেষত্ব আর নেই। কেবল অধ্যয়ন অধ্যাপনা এবং ধর্মালোচনায় তারা নিযুক্ত নন। তারা অধিকাংশই চাকরি করেন, তপস্যা করতে কাউকে দেখি নে। ব্রাহ্মণদের সঙ্গে, ব্রাহ্মণেতর জাতির কোনো কাৰ্যবৈষম্য দেখা