পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বদেশ 8lyS বর্বরতার সোপান। তাহাতেই অন্যায় অবিচার নিষ্ঠুরতার স্বষ্টি করিতে থাকে। প্রকৃত সভ্যতার লক্ষণ কী। সেই সভ্যতা যাহাকে অধিকার করিয়াছে, স সর্বজ্ঞ; সর্বমেবাবিবেশ : তিনি সকলকে জানেন ও সকলের মধ্যে প্রবেশ করেন। যাহ পাশ্চাত্য সভ্যতাকে সর্বদাই উপহাস করে ও ধিক্কার দেয় তাহ হি দুয়ানি, কিন্তু হিন্দুসভ্যতা নহে। তেমনি বাহা প্রাচ্যসভ্যতাকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে তাহ সাহেবিয়ান, কিন্তু স্কুরোপীয় সভ্যত নহে। যে আদর্শ অন্ত অাদর্শের প্রতি বিদ্বেষপরায়ণ তাহা অাদর্শই নহে। সম্প্রতি য়ুরোপে এই অন্ধ বিদ্বেষ সভ্যতার শাস্তিকে কলুষিত করিয়া তুলিয়াছে। রাবণ যখন স্বার্থাদ্ধ হইয়া অধৰ্মে প্রবৃত্ত হইল তখন লক্ষ্মী তাহাকে পরিত্যাগ করিলেন। আধুনিক যুরোপের দেবমণ্ডপ হইতে লক্ষ্মী যেন বাহির হইয়া আসিয়াছেন। সেইজন্যই বোয়ারপল্লীতে আগুন লাগিয়াছে, চীনে পাশবত লজ্জাবরণ পরিত্যাগ করিয়াছে এবং ধর্মপ্রচারকগণের নিষ্ঠুর উক্তিতে ধর্ম উৎপীড়িত হইয়া উঠিতেছে। > ○ebア ধর্মবোধের দৃষ্টান্ত অন্যত্র বলিয়াছি কোনো ইংরেজ অধ্যাপক এ দেশে জুরির বিচার সম্বন্ধে আলোচনাকালে বলিয়াছিলেন যে, যে দেশের অর্ধসভ্য লোক প্রাণের মাহাত্ম্য ( Sanctity of Life) বোঝে না, তাহাদের হাতে জুরি-বিচারের অধিকার দেওয়া অন্যায়। প্রাণের মাহাত্ম্য ইংরেজ আমাদের চেয়ে বেশি বোঝে, সে কথা নাহয় স্বীকার করিয়াই লওয়া গেল । অতএব সেই ইংরেজ যখন প্রাণ হনন করে তখন তাহার অপরাধের গুরুত্ব আমাদের চেয়ে বেশি। অথচ দেখিতে পাই, দেশীয়কে হত্যা করিয়া কোনো ইংরেজ খুনি ইংরেজ জজ ও ইংরেজ জুরির বিচারে ফাসি যায় নাই। প্রাণের মাহাত্ম্য সম্বন্ধে তাহাদের বোধশক্তি যে অত্যন্ত স্থম্ম, ইংরেজ অপরাধী হয়তো তাহার প্রমাণ পায়, কিন্তু সে প্রমাণ দেশীয় লোকদের কাছে কিছু অসম্পূর্ণ বলিয়াই ঠেকে। এইরূপ বিচার আমাদিগকে দুই দিক হইতে আঘাত করে। প্রাণ যা যাবার সে তে৷ যায়ই, ও দিকে মানও নষ্ট নয়। ইহাতে আমাদের জাতির প্রতি যে অবজ্ঞা প্রকাশ পায় তাহা অামাদের সকলেরই গায়ে বাজে । ইংলণ্ডে গ্লোব বলিয়া একটি সংবাদপত্র আছে। সেটা সেখানকার ভদ্রলোকেরই কাগজ। তাহাতে লিথিয়াছে— টমি অ্যাটকিন (অর্থাৎ পণ্টনের গোরা) দেশী লোককে ১ দ্রষ্টব্য অপমানের প্রতিকার, রবীক্স-রচনাবলী, দশম খণ্ড, পৃ. ৪১•