পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ñ) NR JKC S 88 রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী চলল সেথায় যে-দেশ থেকে দেশ গেছে তার মুছে, মা মরেছে, বাপ মরেছে, বাধন গেছে ঘুচে । পথে বাহির হল ওরা ভরসা বুকে ভীমাটি, ছেড়া শিকড় পাবে কি আর পুরোনো তার মাটি । আতার বিচি আতার বিচি নিজে পুতে পাব তাহার ফল, দেখব বলে ছিল মনে বিষম কৌতুহল । তখন আমার বয়স ছিল নয়, অবাক লগত কিছুর থেকে কেন কিছুই হয় । ধুলোবালি একটা কোণে করেছিলুম জড়ো । সেথায় বিচি পুতেছিলুম অনেক যত্ন করে, গাছ বুঝি আজ দেখা দেবে, ভেবেছি রোজ ভোরে । বারান্দাটার পূর্বধারে টেবিল ছিল পাতা, সেইখানেতে পড়া চলত— পুঁথিপত্র খাতা রোজ সকালে উঠত জমে দুর্ভাবনার মতো ; পড়া দিতেন, পড়া নিতেন মাস্টার মন্মথ । পড়তে পড়তে বারে বারে চোখ যেত ওই দিকে, গোল হত। সব বানানেতে, ভুল হত। সব ঠিকে । অধৈৰ্য অসহ্য হত, খবর কে তার জানে কেন আমার যাওয়া-আসা ওই কোণটার পানে । দু, মাস গেল মনে আছে, সেদিন শুক্রবারঅঙ্কুরটি দেখা দিল নবীন সুকুমার । অঙ্ক-কবার বারান্দাতে চুনসুরকির কোণে অপূর্ব সে দেখা দিল, নাচ লাগালো মনে । আমি তাকে নাম দিয়েছি আতা গাছের খুকু, ক্ষণে ক্ষণে দেখতে যেতেম, বাড়ল কতটুকু । দুদিন বাদেই শুকিয়ে যেত সময় হলে তার, এ জায়গাতে স্থান নাহি ওর করত আবিষ্কার ; কিন্তু যেদিন মাস্টার ওর দিলেন মৃত্যুদণ্ড, কচিকচি পাতার কুঁড়ি হল খণ্ড খণ্ড, আমার পড়ার ক্রটির জন্যে দায়ী করলেন ওকে, বুক যেন মোর ফেটে গেল, অশ্রষ্ঠ করল চোখে । দাদা বললেন, কী পাগলামি, শান-বাধানো মেঝে, হেথায় আতার বীজ লাগানো ঘোর বোকামি এ যে ।