পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শান্তিনিকেতন “ || У о је а প্ৰান্তিক G এ কী অকৃতজ্ঞতার বৈরাগ্যপ্ৰলাপ ক্ষণে ক্ষণে, বিকারের রোগীসম অকস্মাৎছুটে যেতে চাওয়া আপনার আবেষ্টন হতে । ধন্য এ জীবন মোরএই বাণী গাব আমি, প্ৰভাতে প্রথম-জাগা পাখি যে সুরে ঘোষণা করে আপনাতে আনন্দ আপন । দুঃখ দেখা দিয়েছিল, খেলায়েছি দুঃখনাগিনীরে ব্যথার বাঁশির সুরে । নানা রজে প্ৰাণের ফোয়ারা করিয়াছি উৎসারিত অন্তরের নানা বেদনায় । ঐকেছি। বুকের রক্তে মানসীর ছবি বার বার ক্ষণিকের পটে, মুছে গেছে রাত্রির শিশিরজলে, মুছে গেছে। আপনার আগ্ৰহস্পর্শনে- তবু আজো আছে তারা সূক্ষ্মরেখা স্বপনের চিত্রশালা জুড়ে, আছে তারা অতীতের শুষ্কমাল্যাগন্ধে বিজড়িত । কালের অজলি হতে ভ্ৰষ্ট কত অব্যক্ত মাধুরী রসে পূৰ্ণ করিয়াছে থরে থরে মনের বাতাস, প্রভাত-আকাশ যথা চেনা-অচেনার বহু সুরে কৃজনে গুজনে ভরা। অনভিজ্ঞ নবকৈশোরের কম্পমান হাত হতে স্বলিত প্ৰথম বরমালা কণ্ঠে ওঠে নাই, তাই আজিও অক্লিষ্ট অমলিন আছে তার অফুট কলিকা। সমস্ত জীবন মোর তাই দিয়ে পুস্পমুকুটিত । পেয়েছি যা অযাচিত প্রেমের অমৃতরস, পাই নি যা বহু সাধনায়দুই মিশেছিল মোর পীড়িত যৌবনে । কল্পনায় বাস্তবে মিশ্ৰিত, সত্যে ছিলনায়, জয়ে পরাজয়ে বিচিত্রিত নাট্যধারা বেয়ে, আলোকিত রঙ্গমঞ্চে, প্রচ্ছন্ন নেপথ্যভূমে, সুগভীর সৃষ্টিরহস্যের যে প্রকাশ পর্বে পর্বে পর্যায়ে পর্যায়ে উদবারিত আমার জীবনরচনায়, তাহারে বাহন করি স্পর্শ করেছিল মোরে কতদিন জাগরণক্ষণে অপরাপ অনির্বাচনীয় । আজি বিদায়ের বেলা স্বীকার করিব তারে, সে আমার বিপুল বিস্ময় । গাব আমি, হে জীবন, অন্তিত্বের সারথি আমার, বহু রণক্ষেত্ৰ তুমি করিয়াছ পার , আজি লয়ে যাও মৃত্যুর সংগ্রামশেষে নবতর বিজয়যাত্রায় । SS