পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সেজুতি যা-কিছু দিয়েছ তারে, তোমার কর্মীর যত সাজ, তোমার পথের যে পাথেয়, তাহে সে পাবে না লাজ রিক্ততায় দৈন্য নহে। তবু জেনো অবজ্ঞা করি নি তোমার মাটির দান, আমি সে মাটির কাছে ঋণীজানায়েছি বারংবার তাহারি বেড়ার প্রান্ত হতে অমূর্তের পেয়েছি সন্ধান । যাবে আলোতে আলোতে লীন হত জড়িযবনিকা, পুষ্পে পুম্পে তৃণে তৃণে৷ রূপে রসে সেই ক্ষণে যে গৃঢ় রহস্য দিনে দিনে হত নিঃশ্বাসিত, আজি মর্তের অপর তীরে বুঝি চলিতে ফিরানু মুখ তাহারি চরম অর্থ খুজি । যবে শান্ত নিরাসক্ত গিয়েছি তোমার নিমন্ত্রণে তোমার অমরাবতী সুপ্ৰসন্ন সেই শুভক্ষণে মুক্তদ্বার ; বুভুকুর লালসারে করে সে বঞ্চিত ; তাহার মাটির পাত্রে যে অমৃত রয়েছে সঞ্চিত নহে তাহা দীন ভিক্ষু লালায়িত লোলুপের লাগি । ইন্দ্রের ঐশ্বৰ্য নিয়ে হে ধরিত্রী, আছ তুমি জাগি ত্যাগীরে প্রত্যাশা করি, নির্লোভেরে সঁপিতে সম্মান, দুৰ্গমের পথিকেরে আতিথ্য করিতে তব দান বৈরাগ্যের শুভ্ৰ সিংহাসনে । ক্ষুব্ধ যারা, লুব্ধ যারা, মাংসগন্ধে মুগ্ধ যারা, একান্ত আত্মার দৃষ্টিহারা শ্মশানের প্রান্তচর, আবর্জনাকুণ্ড তব ঘেরি বীভৎস চীৎকারে তারা রাত্রিদিন করে ফেরাফেরি, নির্লজ হিংসায় করে হানাহানি । শুনি তাই আজি মানুষ-জন্তুর হুহুংকার দিকে দিকে উঠে বাজি । তবু যেন হেসে যাই যেমন হেসেছি বারে বারে পণ্ডিতের মৃঢ়তায়, ধনীর দৈন্যের অত্যাচারে, সজিতের রূপের বিদূপে । মানুষের দেবতারে ব্যঙ্গ করে যে অপদেবতা বর্বর মুখবিকারে তারে হাস্য হেনে যাব, বলে যাব, “এ প্রহসনের মধ্য-অঙ্কে অকস্মাৎ হবে লোপ দুষ্ট স্বপনের ; নাট্যের কবর রূপে বাকি শুধু রবে ভস্মরাশি দগ্ধশেষ মশালের, আর অদৃষ্টের আটহাসি।” বলে যাব, ‘দ্যুতচ্ছলে দানবের মূঢ় অপব্যয় গ্ৰন্থিতে পারে না কভু ইতিবৃত্তে শাশ্বত অধ্যায় ।” বৃথা বাক্য থাক । তব দেহলিতে শুনি ঘণ্টা বাজে, শেষপ্ৰহরের ঘণ্টা ; সেই সঙ্গে ক্লান্ত বক্ষোমাঝে শুনি বিদায়ের দ্বার খুলিবার শব্দ সে অদূরে ধ্বনিতেছে সূর্যান্তের রঙে রাঙা পূরবীর সুরে S Sዓ