তপতী। SS রত্নেশ্বর । রাজকার্যের রহস্য জানি নে, মা, কথা কইতে সাহস হয় না । সুমিত্ৰা । ঠাকুর, বলো, এতে মহারাজের সম্মতি আছে ? দেবদত্ত । সম্মতির প্রয়োজন হয় না, এতে আয়বৃদ্ধি আছে। সুমিত্ৰা । সত্য করে বলো, এই অর্থ রাজকোষ গ্ৰহণ করে ? দেবদত্ত । সেদিন সভাপণ্ডিত ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন অগ্নি যা গ্ৰহণ করেন তাতে মলিনতা থাকে না, রাজার করা সেই অগ্নি । সুমিত্ৰা । আমি পণ্ডিতের ব্যাখ্যা শুনতে চাই নে- বলো, এই অর্থ রাজকোষে আসে ? দেবদত্ত । নিয়মরক্ষার জন্যে কিছু আসে বৈকি, কিন্তু অনিয়মের কবলটা তার চেয়ে অনেক বড়ো, বেশির ভাগ তলিয়ে যায়। সেই গহবরে । মহারানী, অনেক পাপীর উচ্ছিষ্ট রাজকোষে জমা হয় । রত্নেশ্বর । মা, এটুকু কথা নিয়ে দুঃখ কোরো না- আমাদের অন্নসম্বল অল্প, তার কান্না কেঁদে কেঁদে আমাদের স্বর ক্লান্ত । সেই সম্বলকে যখন কেউ স্বল্পতর করে তখন তা নিয়ে অভিযোগ করা আমরা ছেড়ে দিয়েছি । কিন্তু আমাদেরও মর্মস্থান আছে, সেখানে রাজায় প্রজায় ভেদ নেই ; সেখানে যদি রাজা হাত দেন সে আমাদের সইবে না । সুমিত্ৰা । বলো সব কথা । ভয় কোরো না । রত্নেশ্বর । আমরা অত্যন্ত ভীরু, মহারানী, কিন্তু অত্যন্ত দুঃখে আমাদেরও ভয় ভেঙে যায় । সেইজনেই এমন করে চলে আসতে পেরেছি। জানি বিপদ সাংঘাতিক, কিন্তু বিপদের চেয়ে যেখানে গ্লানি দুঃসহ সেখানে আমাদের মতো দুর্বলও বিপদকে গ্রাহ্য করে না। না খেয়ে মরার দুঃখ কম নয় কিন্তু এমন অবস্থা আছে যখন বেঁচে থাকার মতো দুঃখ আর নেই। সুমিত্ৰা । সে কথা আমিও বুঝি। যা তোমার বলবার আছে সব তুমি আমার কাছে বলে । রত্নেশ্বর ৷ তীর্থঘারে কর সংগ্রহের জন্যে রাজার অনুচর নিযুক্ত, সুন্দরী মেয়েদের বিপদ ঘটছে প্রতিদিন । সুমিত্ৰা । সর্বনাশ ! সত্য বলছ ? রত্নেশ্বর । যে কথা নিয়ে মানুষ মরতে প্ৰস্তুত হয়, আমি সেই কথা শুধু মুখে বলতে এসেছি মহারানী, এই আমার লজা । আমার ছোটোবোন গিয়েছিল তীর্থে, হতভাগিনী আজও ফেরে নি । সুমিত্ৰা । এও তুমি সহ্য করেছ ? রত্নেশ্বর । সহ্য করব না, সেই পণ করেই বেরিয়েছি। নিজের হাতেই দণ্ড তুলতে হবে, কিন্তু তার আগে রাজদণ্ডের শেষ দোহাই পেড়ে যাব । তার পরে ধর্মই জানেন, আর আমিই জানি । সুমিত্ৰা । এই সমস্ত কি শিলাদিত্যের জ্ঞাতসারে ? রত্নেশ্বর । তারই ইচ্ছাক্রমে । সুমিত্ৰা । ঠাকুর, সত্য করে বলো, রাজার কানে এ কথা কি আজও ওঠে নি । দেবদত্ত । তোমার কাছে কোনোদিন মিথ্যা বলি নি, আজও বলব না । রত্নেশ্বর, তোমার আবেদন হল, এখন যাও ঐ আমার কুটির দেখা যাচ্ছে। 3CrGR erja সুমিত্ৰা । ঠাকুর, রাজার কাছে এই অভিযোগ আসে নি ? দেবদত্ত । ই এসেছে । মন্ত্ৰী দ্বিধা করেছিলেন, আমি স্বয়ং জানিয়েছি । সুমিত্ৰা । ফল কী হল। দেবদত্ত । শুনে লাভ নেই। রাজারা যখন অন্যায় করেন তখন তার সমর্থনের জন্যে অতি ভীষণ হয়ে ওঠেন । সুমিত্ৰা । ঠাকুর, ভীষণতা অন্যায়ের ছদ্মবেশ ; ভয় করে তাকে যেন সম্মান না করি । অন্যায়কারীকে ক্ষুদ্র বলেই জানতে হবে, অতি ক্ষুদ্র, তার হাতে যত বড়ো একটা দণ্ড থাক। তাকে যদি ভয় করি তবে তার চেয়েও ক্ষুদ্র হতে হবে । শিলাদিত্য উৎসবের নিমন্ত্রণে রাজধানীতে এসেছে ? Σ Σ ΙΣ Ν.
