পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SS রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী দেবদত্ত । ইয়া, এসেছে । সুমিত্ৰা । মন্ত্রীকে আদেশ করো তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাই । দেবদত্ত । মহারানী ! সুমিত্ৰা । তুমি যা বলবে। আমি তা সব জানি, সমস্ত জেনেই বলছি আজ তার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হওয়া চাই । দেবদত্ত । আগে উৎসব সমাধা হােক । সুমিত্ৰা । এ পাপের বিচার না হলে আজ উৎসব হতেই পারবে না । দেবদত্ত । মহারানী, সাবধান হবার অত্যন্ত প্রয়োজন আছে । সুমিত্ৰা । আমাকে নিবৃত্ত কোরো না । একদিন আগুনে ঝাপ দিতে গিয়েছিলুম, সুবিজ্ঞের পরামর্শে নিবৃত্ত হয়েছি। তখনই সংকল্প রক্ষা করলে এত অমঙ্গল ঘটত না এ জগতে । শিলাদিত্যের বিচার যদি না হয় তা হলে এ রাজত্বে রানী হবার লজা আমি সাইব না । ঐ-যে গর্জন শুনতে পাচ্ছি। দ্বারের यद्भ । দেবদত্ত । দয়াময়ী, কতটুকুই বা শুনলে । সবটা কানে উঠলে কান বধির হয়ে যেত। যে নিঃসহায়দের সামনে সকল দ্বার রুদ্ধ তাদের কণ্ঠও রুদ্ধ থাকে, তাই তো আছি। আমরা আরামে । বাধা আজ অল্প-একটু বুঝি সরেছে- তাই শুমরে ওঠা দুঃখসমুদ্রের ধ্বনি সামান্য একটু শোনা গেল । সুমিত্ৰা । ঠাকুর, বাধা আছে তো আছে- কিন্তু তার সামনে দাড়িয়ে আর্তনাদ করছে কেন, ভীরু সব । বিধাতা যাদের অবজ্ঞা করেন তাদের দয়া করেন না তাও কি এরা জানে না ? দ্বার ভেঙে ফেলুক-না । বিচার ভয়ে ভয়ে চায় বলেই তো। ওরা বিচার পায় না। রাজা যত বড়ো জোরের সঙ্গে ওদের কাছে কর দাবি করে, তত বড়ো জোরের সঙ্গেই ওদের বিচার চাবার অধিকার । ধর্মের বিধান মানুষের অনুগ্রহের দান নয়। আমাকে নিয়ে চলো ঠাকুর, ওদের মাঝখানে । দেবদত্ত । মহারানী, তোমার নিজের জায়গায় থাকলেই ওদের বাচাতে পারবে ; তোমার আসন যেখানে তোমার শক্তি সেখানেই । সুমিত্ৰা । আমার আসন ! আমার আসন আমি পাই নি। অহৰ্নিশি সেই শূন্যতা সইতে পারছি নে, মন কেবলই বলছে, রুদ্রভৈরবের পায়ের কাছেই আমার স্থান- দেখিয়ে দিন তিনি পথ, ভেঙে দিন তিনি বিঘ্ন, ব্যর্থতার অপমান থেকে সেবিকাকে উদ্ধার করুন । [ উভয়ের প্রস্থান নরেশ ও বিপাশার প্রবেশ নরেশ । শোনো শোনো, বিপাশা, শুনে যাও । বিপাশা । শোনবার যোগ্য কথা থাকলে তবেই শুনিব । নরেশ । আমি বলতে এসেহি জালন্ধর কাশ্মীর জয় করে নি । বিপাশা। কবে তোমার ভুল ভাঙল । নরেশ । প্রতিদিনই ভাঙছে। প্রতিদিনই প্ৰমাণ পাচ্ছি, কাশ্মীরই জালন্ধর জয় করেছে । হার মানলুম। এখন প্ৰসন্ন হও । বিপাশা । তার সময় আসে নি । নরেশ । কবে আসবে । * বিপাশা। যখন আর-একবার তোমরা সৈন্য নিয়ে কাশ্মীরে যুদ্ধ করতে যাবে। নরেশ । যাব যুদ্ধ করতে, চেষ্টা করে হেরেও আসব। বিপাশা। চেষ্টা করতে হবে না, বীরপুরুষ। সেই যুদ্ধটা না দেখে আমি যেন না মারি । ছলনাকে গীেরব বলে অহংকার করছ, সেইটো চুৰ্ণ হবে। তবেই ধর্ম আছেন এ কথা মানব । নরেশ । সত্য বলছি, সেই গৌরবটাকে ফেলে দিতে পারলে বাচি ।