পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(၂၈ōရှဲ Sዓ (፩ মঞ্জরী। কী মুখস্থ করছি। ত্ৰিবেদী । মকরকেতুর স্তব । রাজার আদেশ । কালিন্দী । তোমারও এই দশা ? ত্ৰিবেদী। দেখছি না, মধুকরের গুঞ্জন আর শোনা যাচ্ছে না | সংস্কৃত শৌরসেনী মাগধী অর্ধমাগধী মহারাষ্ট্ৰী পারসিক যাবনিক নানা ভাষায় আজ অভ্যাস চলছে। এর থেকে বোঝা যাচ্ছে মকরকেতুর সকল দেশের সকল ভাষাতেই পাণ্ডিত্য । কালিন্দী । কিন্তু অনুচ্চারিত ভাষাই তিনি সব চেয়ে ভালো বোঝেন। দাদাঠাকুর, একটা কথার উত্তর দাও । মকরকেতুর পূজার বিধান পেয়েছ কোন বেদে । ত্ৰিবেদী। চুপ চুপ । কী কণ্ঠস্বরই পেয়েছ তোমরা পুরাঙ্গনারা। কালিন্দী । অরসিক, বয়স হয়েছে বলে কি কণ্ঠস্বরের বিচারবুদ্ধিটাও খোয়াতে হবে । তোমাদের কবি যে কোকিলের সঙ্গে এই কণ্ঠের তুলনা করেন। ত্ৰিবেদী । অন্যায় করেন না । কোনো কথা গোপনে বলবার অভ্যাস ঐ পাখিটার নেই। কালিন্দী । দাদাঠাকুর, তোমার সঙ্গে গোপন কথা বলবার মতো মনের ভাব আমার নয়। শাস্ত্রের বিচার চাই । এরা বলছিল, পুরাণে অতনুর নেই তনু, আবার বেদে নেই তার নামগন্ধ- বাকি রইল কী । তা হলে পূজাটা হবে কাকে নিয়ে । ত্ৰিবেদী। আরো চুপ চুপ- স্বরটাকে আর-এক সপ্তক নামিয়ে আনে । মঞ্জরী। কেন, ঠাকুর, ভয় কাকে ? ত্ৰিবেদী। যারা নতুন দেবতার পূজা চালাতে চায় তারা ভক্তির জোরের চেয়ে গায়ের জোরটা বেশি ব্যবহার করে । আমি ভালোমানুষ, দেবতার চেয়ে এই দেবতাভক্তদের ভয় করি অনেক বেশি। গৌরী। ঠাকুর, আমি বলছিলুম। এইসব হঠাৎ-দেবতার আবার পূজা কিসের। ত্ৰিবেদী । মূঢ়ে, যারা বনেদি দেবতা তাদের এত উগ্রতা নেই। সংসারে হঠাৎ-দেবতারাই সাংঘাতিক । তাদের পূজা করায় ব্যর্থতা, না-পূজা করায় সর্বনাশ । অতএব ছাড়ো তর্ক, পরো মঞ্জীর, আনো বীণা, গাথো মালা- পঞ্চশরের শরগুলোকে শান দেও গে । কালিন্দী । কিন্তু তোমার মন্ত্রটি পেলে কোথা থেকে ঠাকুর । ত্ৰিবেদী । যিনি পূজা প্রচার করছেন পূজার মন্ত্ররচনা তারই। আমি সেটাকে শ্রুতির দ্বারা গ্ৰহণ ক'রে স্মৃতির দ্বারা ব্যক্ত করব । দেখে নিয়ো, রাজসভায় শ্রুতিভূষণ বলবেন, সাধু, স্মৃতিরত্নাকর বলবেন, অহাে কিমাশ্চর্যাম । মঞ্জরী । ও কী ও ভাই, বাইরে যে অন্ত্রের ঝঙ্কনি শোনা গেল । কালিন্দী । হয়তো। ওটা সত্যকার নয় । হয়তো উৎসবের একটা কোনো পালার অভ্যাস চলছে। গৌরী । ত্ৰিবেদীঠাকুর, এও বুঝি তোমাদের জলন্ধরের সৃষ্টিছাড়া কীর্তি ? মীনকেতুর উৎসবে রক্তপাতের পালা ? ত্ৰিবেদী । সুন্দরী, জগতে এ পালা বার বার অভিনয় হয়ে গেছে। ত্ৰেতাযুগে এই পালায় একবার রাক্ষসে বানরে মিলে অগ্নিকাণ্ড করেছিল। কলিযুগে তাদের বংশ বেড়েছে বৈ কমে নি । যাইহােক শব্দটা ভালো লাগছে না- . যাও তোমরা মন্দিরে আশ্রয় লও গে । [সকলের প্রস্থান ܓ সুমিত্রা ও প্রতিহারীর প্রবেশ সুমিত্ৰা । সেই প্ৰজাকে চাই, রত্নেশ্বর তার নাম । প্রতিহারী । তাকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না, মহারানী ।