পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

እ ዓbr রবীন্দ্র-রচনাবলী বিক্ৰম । দেবদত্ত, অভিযোগ কে এনেছে । কার নামে অভিযোগ । দেবদত্ত । বুধকোট থেকে প্ৰজা এসেছে, নাম রত্নেশ্বর, শিলাদিতোর নামে অভিযোগ । বিক্রম । আমাকে লঙঘন করে রানীর কাছে কেন এই অভিযোগ । \ দেবদত্ত। প্রশ্ন যখন করলে তখন সত্য কথা বলব, তােমার কাছে পূর্বেই অভিযোগ হয়েছে। বিক্ৰম । আমি কি কান দিই নি । দেবদত্ত । কান দিয়েছিলে, বলেছিলে বিশ্বাস কর না । বিক্রম । সেই তো বিচার । অমাত্যের নামে মিথ্যা অপবাদ দিলে তারও বিচার রাজাকে করতে হবে না ? জান শিলাদিত্যের পরে যে ভার আছে সে অতি কঠিন । প্রত্যন্তদেশের সীমা রক্ষা করতে হয় তাকেই । দেবদত্ত । রাজার প্রতিনিধিরূপে ধৰ্মরক্ষা করাও তারই কাজ । বিক্ৰম । কে বললে সে তা করে নি । দেবদত্ত । তোমার নিজের অন্তরই বলছে, তাই আমার 'পরে এত রাগ করছে । অভিযোগকারীকে আমিই তোমার কাছে নিয়ে গেছি। মন্ত্রী সাহস করে নি । সেদিন দেখি নি কি বিচারকালে ক্ষণে ক্ষণে তোমার ভূকুটি । দণ্ড তোমার কতবার উদ্যত হয়েও দুর্বল দ্বিধায় নিরস্ত হয়েছে সে কথা স্বীকার করবে: कीं ? বিক্রম । সাবধান ! আমি দুর্বল ! কিসের ভয়ে দুর্বল ! দেবদত্ত । শিলাদিত্যকে যে-শক্তি নিজে দিয়েছ আজ তার প্রতিরোধ করা তোমার নিজের পক্ষেও দুঃসাধ্য- এই কারণেই দ্বিধা । তুমি ওদের ভয় করতে আরম্ভ করেছ— আমাদের ভয় সেইখানেই । বিক্ৰম । অসহ্য তোমার স্পর্ধা ! অনুতাপের দিন তোমার আসন্ন । সুমিত্ৰা । আৰ্যপুত্র, আমাদের দণ্ড দেওয়া সহজ কথা- সেজন্যে রাজশক্তির প্রয়োজন হবে না । কিন্তু শিলাদিত্যের বিচার আজই করা চাই । বিক্ৰম । অভিযোগ যার সে কই ? সুমিত্ৰা । সে আমি । বিক্রম । তুমি ? সুমিত্ৰা । যে হতভাগা এসেছিল তাকে পাওয়া যাচ্ছে না । বিক্ৰম । নিজের মিথ্যারি ভয়ে সে পালিয়েছে । সুমিত্ৰা । মহারাজ, তুমি নিশ্চয় জান কে তাকে হরণ করেছে। বিক্ৰম । মহারানী, অন্ধ দয়া আর অস্পষ্ট অনুমানের দ্বারা বিচার হয় না । রত্নেশ্বরকে নিয়ে নরেশের প্রবেশ নরেশ । শিলাদিত্যের লোক একে বলপূর্বক ধরে নিয়ে যাচ্ছিল রাজদ্বারের সম্মুখ দিয়ে । আমার নিষেধ শুনলে না। তলোয়ার খুলতে হল রাজা আছেন এই কথা এদের স্মরণ করিয়ে দিতে । বিক্রম। কেন ওকে ধরে নিয়ে যাচ্ছিল । , নরেশ । বললে শিলাদিত্যের আদেশ । সে আদেশের উপরে তোমার আদেশ কী, সেইটো শোনবার জন্যে অপেক্ষা করছি । রত্নেশ্বর । মহারানী, আমার রক্ষা নেই সে আমি জানি, কিন্তু বিচার চাই- সে বিচার আজই যেন হয়, তোমার সামনেই যেন হয়, দোহাই তোমার । সুমিত্ৰা । মূঢ়, ঐ যে মহারাজ আছেন, ওঁকে জানাও তোমার অভিযোগ । রত্নেশ্বর । মহারাজ, মর্মঘাতী দুঃখ আমাদের- সে দুঃখ বাধা মানবে না, বিলম্ব সাইবে না, মৃত্যু যন্ত্রণার চেয়ে সে প্রবল ।