পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ミ8の রবীন্দ্র-রচনাবলী রাত্রি যখন দুইপ্রহর, আধোম্বুমে সে শুনতে পায় এক বীণাধানির আর্তরাগিণী । স্বপ্নে বহুদূরের খািল আসে। মনে হয়, এই সুর চিরদিনের লে। চিবিরহের সন্ধিত আৰু বুকের মধ্যে উলে 32 সখী, আঁধারে একেলা ঘরে মন মানে না । কিসের পিয়াসে কোথা যে যাবে সে, পথ জানে না । ঝরঝর নীরে, নিবিড় তিমিরে, সজল সমীরে গো, যেন কার বাণী কভু প্ৰাণে আনে কিছু আনে না। রাতের পর রাত যায়। অন্ধকারে তরুতলে যে মানুষ ছায়ার মতো নাচে তাকে চোখে দেখি নে, তার হৃদয় দেখি— জনশূন্য দেওদার-বনের দোলায়িত শাখায় যেন দক্ষিণ সমুদ্রের হাওয়ার হাহাকার। রানী মনে ভাবে, যখন সে কাছে এল তখন ছিল কৃষ্ণসন্ধ্যা । যখন চাদ উঠল তখন তার মালাখানি রইল, সে ब्रश्न नां । যখন এসেছিলে অন্ধকারে চাদ ওঠে নি সিন্ধুপারে। হে অজানা, তোমায়। তবে জেনেছিলেম অনুভবে, গানে তোমার পরশখানি বেজেছিল প্ৰাণের তারে । তুমি গেলে যখন একলা চলে চাদ উঠেছে রাতের কোলে । তখন দেখি পথের কাছে মালা তোমার পড়ে আছে, বুঝেছিলেম অনুমানে এ কণ্ঠহার দিলে কারে । কী হল রাজমহিষীর । কোন হতাশের বিরহ তার বিরহ জাগিয়ে তোলে। কোন রাত-জাগা পাখি নিস্তব্ধ নীড়ের পাশ দিয়ে তুহু করে উড়ে যায়, তার পাখার শব্দে ঘুমন্ত পাখির পাখা উৎসুক হয়ে ওঠে (N বীণায় বাজতে থাকে কেদারা বেহাগ, বাজে কালাংড়া । আকাশে আকাশে তারাগুলি যেন তামসী তপস্বিনীর নীরব জপমাত্র । বীণাধর্মনি যেন আজ আর বাইরে নেই ; এসেছে তার অন্তরের তন্তুতে VVáCN5 | ওই বুঝি বাঁশি বাজে বনমাঝে কি মনোমাকে । বসন্ত বায় বহিছে। কোথায়, কোথায় ফুটেছে ফুল, বলে গোসজনি, এ সুখরজনী কোনখানে উদিয়াছেবনমাঝে কি মনোমাকে । যাব কি যাব না মিছে। এ ভাবনা, মিছে মারি ভয়ে লাজে । কী জানি কোথা সে বিরহহতাশে ফিরে অভিসারসাজেবনমাঝে কি মনোমাকে । রাজমহিষী বিছানায় উঠে বসে, শ্ৰান্ত তার বেণী, ত্রান্ত তার বক্ষ । বীণার গুজরণ আকাশে মেলে দেয় অন্তহীন অভিসারের পথ । রাগিণীবিছানো সেই শূন্যপথে বেরিয়ে পড়ে তার মন । কার দিকে । দেখার আগে যাকে চিনেছিল, দেখার পরে যাকে ভুলেছিল তারই দিকে । একদিন নিমফুলের গন্ধ অন্ধকার ঘরে নিয়ে এল অনির্বচনীয়ের আমন্ত্রণ। মহিষী দাঁড়াল বিছানা ছেড়ে বাতায়নের কাছে। নীচে সেই ছায়ামূর্তির” নাচ, বিরহের সেই উর্মিদোলা ।