পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

引覇も暖 e)S q পাইয়া আমি তোমাদের বাসা সন্ধান করিয়া বাহির করিয়াছি । তোমার সহিত সাক্ষাতের দুরাশা আমার নাই এবং অন্তর্যামী জানেন, তোমার গাৰ্হস্থ্যসূখের মধ্যে উপদ্রবের মতো প্ৰবেশলাভ করিবার দূরভিসন্ধিও আমি রাখি না। সন্ধ্যার সময় তোমাদের বাসার সম্মুখবতী একটি গ্যাসপোস্টের তলে আমি সূর্যোপাসকের ন্যায় দাড়াইয়া থাকি, তুমি ঠিক সাড়ে সাতটার সময় একটি প্ৰজ্বলিত কেবেসিন ল্যাম্প লইয়া প্ৰত্যহ নিয়মিত তোমাদের দোতলার দক্ষিণ দিকের ঘরের কাচের জানলাটির সম্মুখে স্থাপন কর ; সেইসময় মুহুর্তকালের জন্য তোমার দীপালোকিত প্ৰতিমাখনি আমার দৃষ্টিপথে উদ্ভাসিত হইয়া উঠে, তোমার সম্বন্ধে আমার এই একটিমাত্র । অপরাধ । ইতিমধ্যে ঘটনাক্রমে তোমার স্বামীর সহিত আমার আলাপ এবং ক্রমে ঘনিষ্ঠতাও হইয়াছে। তাহার চরিত্র যেরূপ দেখিলাম তাহাতে বুঝিতে বাকি নাই যে, তোমার জীবন সুখের নহে। তোমার প্রতি আমার কোনোপ্রকার সামাজিক অধিকার নাই, কিন্তু যে বিধাতা তোমার দুঃখকে আমার দুঃখে পরিণত করিয়াছেন তিনিই সে দুঃখমোচনের চেষ্টাভার আমার উপরেই স্থাপন করিয়াছেন । অতএব আমার স্পর্ধা মাপ করিয়া শুক্রবার সন্ধ্যাবেলায় ঠিক সাতটার সময় গোপনে পালকি করিয়া একবার বিশ মিনিটের জন্য আমার বাসায় আসিলে আমি তোমাকে তোমার স্বামী সম্বন্ধে কতকগুলি গোপন কথা বলিতে চাহি, যদি বিশ্বাস না করি এবং যদি সহ্য করিতে পার তবে তৎসম্বন্ধে প্রমাণও দেখাইতে পারি, এবং সেই সঙ্গে কতকগুলি পরামর্শ দিতেও ইচ্ছা করি ; আমি ভগবানকে অন্তরে রাখিয়া আশা করিতেছি, সেই পরামর্শ মতে চলিলে তুমি একদিন সুখী হইতে পরিবে । আমার উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ নিঃস্বাৰ্থ নহে। ক্ষণকালের জন্য তোমাকে সম্মুখে দেখিব, তোমার কথা শুনিব এবং তোমার চরণতলম্পর্শে আমার গৃহখানিকে চিরকালের জন্য সুখস্বল্পমণ্ডিত করিয়া তুলিব, এ আকাঙক্ষাও আমার অন্তরে আছে। যদি আমাকে বিশ্বাস না কর এবং যদি এ সুখ হইতেও আমাকে বঞ্চিত করিতে চাও, তবে সে কথা আমাকে লিখিয়ো, আমি তদুত্তরে পত্ৰযোগেই সকল কথা জানাইব । যদি চিঠি লিখিবার বিশ্বাসও না থাকে। তবে আমার এই পত্ৰখানি তোমার স্বামীকে দেখাইয়ো, তাহার পরে আমার যাহা বক্তব্য তাহা তাহাকেই বলিব । fVJEQVergì শ্ৰীমন্মথনাথ মজুমদার আষাঢ় ১৩০৫ অধ্যাপক প্ৰথম পরিচ্ছেদ কলেজে আমার সহপাঠীসম্প্রদায়ের মধ্যে আমার একটু বিশেষ প্রতিপত্তি ছিল । সকলেই আমাকে সকল বিষয়েই সমজদার বলিয়া মনে করিত । ইহার প্রধান কারণ, ভুল হউক আর ঠিক হউক, সকল বিষয়েই আমার একটা মতামত ছিল । অধিকাংশ লোকেই হয় এবং না জোর করিয়া বলিতে পারে না, আমি সেটা খুব বলিতাম। কেবল যে আমি মতামত লইয়া ছিলাম তাহা নহে, নিজেও রচনা করিতাম ; বক্তৃতা দিতাম, কবিতা লিখিতাম, সমালোচনা করিতাম, এবং সর্বপ্রকারেই আমার সহপাঠীদের ঈর্ষা ও শ্রদ্ধার পাত্ৰ হইয়াছিলাম । কলেজে এইরূপে শেষ পর্যন্ত আপন মহিমা মহীয়ান রাখিয়া বাহির হইয়া আসিতে পারিতাম। কিন্তু ইতিমধ্যে আমার খ্যাতিস্থানের শনি এক নূতন অধ্যাপকের মূর্তি ধারণ করিয়া কলেজে উদিত হইল।