পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

se VOLG গোয়ী কহিল, “আমার খুশি ।” সেদিন হইতে পাহারা বসাইয়া শ্ৰীকে ঘরে রুদ্ধ করিয়া পরেশ এমনি উপদ্রব আরম্ভ করিলেন যে শহরময় কুৎসা রটিয়া গেল । এই সকল কুৎসিত অপমান ও অত্যাচারের সংবাদে পরমানন্দের হরিচিন্তা দূর হইয়া গেল। এই নগর অবিলম্বে পরিত্যাগ করা তিনি কর্তব্য বোধ করিলেন, অথচ উৎপীড়িতকে ফেলিয়া কোনোমতেই দূরে যাইতে পারিলেন না। সন্ন্যাসীর এই কয়দিনকার দিনরাত্রের ইতিহাস কেবল অন্তর্যামীই জানেন ! অবশেষে অবরোধের মধ্যে থাকিয়া গৌরী একদিন পত্র পাইল, “বৎসে, আলোচনা করিয়া দেখিলাম, ইতিপূর্বে অনেক সাধবী সাধকরমণী কৃষ্ণপ্রেমে সংসার ত্যাগ করিয়াছেন । যদি সংসারের অত্যাচারে হরিপাদপদ্ম হইতে তোমার চিত্ত বিক্ষিপ্ত হইয়া থাকে, তবে জানাইলে ভগবানের সহায়তায় তাহার সেবিকাকে উদ্ধার করিয়া প্রভুর অভয় পদারবিন্দে উৎসর্গ করিতে প্ৰয়াসী হইব।। ২৬শে ফালুন বুধবারে অপরাহু ২ ঘটিকার সময় ইচ্ছা করিলে তোমাদের পুষ্করিণীতীরে আমার সহিত সাক্ষাৎ হইতে পরিবে ।” গৌরী পত্ৰখানি কেশে বাধিয়া খোপার মধ্যে ঢাকিয়া রাখিল।। ২৬শে ফায়ুন মধ্যাহ্নে স্নানের পূর্বে চুল খুলিবার সময় দেখিল, চিঠিখানি নাই। হঠাৎ সন্দেহ হইল, হয়তো চিঠিখানি কখন বিছানায় স্থলিত হইয়া পডিয়াছে এবং তােহা তাহার স্বামীর হস্তগত হইয়াছে। স্বামী সে পত্র-পাঠে ঈর্ষায় দগ্ধ হইতেছে মনে করিয়া গৌরী মনে মনে একপ্রকার জ্বালাময় আনন্দ অনুভব করিল ; কিন্তু তাহার শিরোভূষণ পত্ৰখানি পাষণ্ডহস্তম্পর্শে লাঞ্ছিত হইতেছে, এ কল্পনাও তাহার সহ্য হইল না । দ্রুতপদে স্বামীগৃহে গেল । দেখিল, স্বামী ভূতলে পড়িয়া গো গো করিতেছে, মুখ দিয়া ফেনা পড়িতেছে, চক্ষুতারকা কপালে উঠিয়াছে। দক্ষিণ বদ্ধমুষ্টি হইতে পত্ৰখানি ছাড়াইয়া লইয়া তাড়াতাড়ি ডাক্তার ডাকিয়া পাঠাইল । ডাক্তার আসিয়া কহিল, আপোপ্লেক্সি- তখন রোগীর মৃত্যু হইয়াছে। সেইদিন মফস্বলে পরেশের একটি জরুরি মকদ্দমা ছিল । সন্ন্যাসীর এতদূর পতন হইয়াছিল যে, তিনি সেই সংবাদ লইয়া গৌরীর সহিত সাক্ষাতের জন্য প্ৰস্তুত হইয়াছিলেন । সদাবিধবা গৌরী যেমন বাতায়ন হইতে গুরুদেবকে চোরের মতো পুষ্করিণীর তটে দেখিল, তৎক্ষণাৎ বজচকিতের ন্যায় দৃষ্টি অবনত করিল । গুরু যে কোথা হইতে কোথায় নামিয়াছেন, তাহা যেন বিদ্যুতালোকে সহসা এই মুহুর্তে তাহার হৃদয়ে উদভাসিত হইয়া উঠিল । গুরু ডাকিলেন, “ গৌরী ।” গৌরী কহিল, “আসিতেছি, গুরুদেব ।” মৃত্যুসংবাদ পাইয়া পরেশের বন্ধুগণ যখন সৎকারের জন্য উপস্থিত হইল, দেখিল, গীেরীর মৃতদেহ স্বামীর পার্থে শয়ান । সে বিষ খাইয়া মরিয়াছে । আধুনিক কালে এই আশ্চর্য সহমরণের দৃষ্টান্তে সতীমাহায়ে সকলে স্তম্ভিত হইয়া গেল । eff S to a ভিটা ছাডিতে হইল । কেমন করিয়া, তাহ খোলসা করিয়া বলিব না, আভাস দিব মাত্র । আমি পাড়াগেয়ে নেটিভ ডাক্তার, পুলিসের থানার সম্মুখে আমার বাড়ি। যমরাজের সহিত আমার যে পরিমাণ আনুগত্য ছিল দারোগীবাবুদের সহিত তাহা অপেক্ষা কম ছিল না, সুতরাং নর ও নারায়ণের দ্বারা মানুষের যত বিবিধ রকমের পীড়া ঘটিতে পারে তাহা আমার সূগোচর ছিল। যেমন মণির দ্বারা