পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

w9ዒ8 রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী ছিল না, শুভদৈবক্রমে তাহার নিকট হইতে পরিত্রাণ পাইয়া নিজেকে ধন্য জ্ঞান করিলেন । মনে করিলেন, যদি এই মেয়েটির বাপের কাছে যাইতাম এবং সে ব্যক্তি আমার প্রার্থনা-অনুসারে কন্যাটিকে কোনোমতে আমার হাতে সমৰ্পণ করিয়া নিষ্কৃতি লাভের চেষ্টা করিত ! যতক্ষণ আয়ত্তচু্যত এই মেয়েটির মোহ তাহার মনটিকে আলোড়িত করিতেছিল ততক্ষণ নিজের বাধুটি সম্বন্ধে একেবারে অন্ধ হইয়া ছিলেন । নিকটেই আর কোথাও কিছু সান্তনার কারণ ছিল কি না তাহা অনুসন্ধান করিয়া দেখিবার প্রবৃত্তিও ছিল না। যেই শুনিলেন মেয়েটি বোবা ও কালা আমনি সমস্ত জগতের উপর হইতে একটা কালো পর্দা ছিন্ন হইয়া পড়িয়া গেল ! দূরের আশা দূর হইয়া নিকটের জিনিসগুলি প্রত্যক্ষ হইয়া উঠিল । সুগভীর পরিত্রাণের নিশ্বাস ফেলিয়া কান্তি লজ্জাবনত বধূর মুখের দিকে কোনো-এক সুযোগে চাহিয়া দেখিলেন । এতক্ষণে যথার্থ শুভদৃষ্টি হইল । চর্মচক্ষুর অন্তরালবতী মনোনেত্রের উপর হইতে সমস্ত বাধা খসিয়া পডিল । হৃদয় হইতে এবং প্ৰদীপ হইতে সমস্ত আলোক বিছুরিত হইয়া একটিমাত্র কোমল সুকুমার মুখের উপরে প্রতিফলিত হইল ; কান্তি দেখিলেন, একটি স্নিগ্ধ শ্ৰী, একটি শান্ত লাবণো মুখখানি মণ্ডিত । বুঝিলেন, নবীনের আশীর্বাদ সার্থক হইবে । स्ठानि »७०१ যজ্ঞেশ্বরের যজ্ঞ এক সময় যজ্ঞেশ্বরের অবস্থা ভালোই ছিল । এখন প্রাচীন ভাঙা কোঠাবাড়িটাকে সাপ-ব্যাঙ-বাদুড়ের হন্তে সমৰ্পণ করিয়া খোড়ো ঘরে ভগবদগীতা লইয়া কালব্যাপন করিতেছেন । এগারো বৎসর পূর্বে তাহার মেয়েটি যখন জন্মিয়ছিল তখন বংশের সৌভাগ্যশশী কৃষ্ণপক্ষের শেষকলায় আসিয়া ঠেকিয়াছে । সেইজন্য সাধ করিয়া মেয়ের নাম রাখিয়াছিলেন কমলা । ভাবিয়াছিলেন, যদি এই কৌশলে ফাকি দিয়া চঞ্চলা লক্ষ্মীকে কন্যারূপে ঘরে ধরিয়া রাখিতে পারেন । লক্ষ্মী সে ফন্দিতে ধরা দিলেন না, কিন্তু মেয়েটির মুখে নিজের শ্ৰী রাখিয়া গেলেন ; বডো সুন্দরী CN3 মেয়েটির বিবাহ সম্বন্ধে যজ্ঞেশ্বরের যে খুব উচ্চ আশা ছিল তাহা নহে । কাছাকাছি যে-কোনো একটি সৎপাত্রে বিবাহ দিতে তিনি প্ৰস্তুত ছিলেন । কিন্তু তাহার জ্যাঠাইমা তাহার বডো আদরের কমলাকে বড়ো ঘর না হইলে দিবেন না, পণ করিয়া বসিয়া আছেন । তাহার নিজের হাতে অল্প কিছু সংগতি ছিল, ভালো পাত্ৰ পাইলে তাহা বাহির করিয়া দিবেন, স্থির করিয়াছেন । অবশেষে জ্যাঠাইমার উত্তেজনায় শাস্ত্ৰাধ্যয়নগুঞ্জিত শান্ত পল্লীগৃহ ছাড়িয়া যজ্ঞেশ্বর পাত্ৰ-সন্ধানে বাহির হইলেন । রাজশাহিতে তাহার এক আত্মীয় উকিলের বাডিতে গিয়া আশ্রয় লইলেন । এই উকিলের মকেল ছিলেন জমিদার গীেরসুন্দর চৌধুরী । তাহার একমাত্র পুত্র বিভূতিভূষণ। এই উকিলের অভিভাবকতায় কলেজে পড়াশুনা করিত । ছেলেটি কখন যে মেয়েটিকে আসিয়া দেখিয়াছিল তাহা ভগবান প্ৰজাপতিই জানিতেন । কিন্তু প্ৰজাপতির চক্রান্ত যজ্ঞেশ্বরের বুঝিবার সাধ্য ছিল না। তাই বিভূতি সম্বন্ধে তাহার মনে কোনোপ্রকার দূরাশা স্থান পায় নাই । নিরীহ যজ্ঞেশ্বরের অল্প আশা, অল্প সাহস ; বিভূতির মতো ছেলে যে তাহার জামাই হইতে পারে এ তাহার সন্তব বলিয়া বোধ হইল না । উকিলের যত্নে একটি চলনসই পাত্রের সন্ধান পাওয়া গেছে । তাহার বুদ্ধিাশুদ্ধি না থাক, বিষয়-আশয় আছে । পাস একটিও দেয় নাই বটে। কিন্তু কালেক্টরিতে ৩,২৭৫ টাকা খাজনা দিয়া ९lgछ ।