পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ver রবীন্দ্র-রচনাবলী উলুখড়ের বিপদ বাবুদের নায়েব গিরিশ বসুর অন্তঃপুরে প্যায়ী বলিয়া একটি নূতন দাসী নিযুক্ত হইয়াছিল। তাহার বয়স অল্প ; চরিত্র ভালো। দূর বিদেশ হইতে আসিয়া কিছুদিন কাজ করার পরেই একদিন সে বৃদ্ধ নায়েবের অনুরাগসৃষ্টি হইতে আত্মরক্ষার জন্য গৃহিণীর নিকট কাদিয়া গিয়া পড়িল । গৃহিণী কহিলেন, “বাছা, তুমি অন্য কোথাও যাও ; তুমি ভালোমানুষের মেয়ে, এখানে থাকিলে তোমার সুবিধা হইবে না।” বলিয়া গোপনে কিছু অর্থ দিয়া বিদায় করিয়া দিলেন । কিন্তু পালানো সহজ ব্যাপার নহে, হাতে পথ-খরচও সামান্য, সেইজন্য প্যায়ী গ্রামে হরিহর ভট্টাচার্য মহাশয়ের নিকটে গিয়া আশ্ৰয় লইল । বিবেচক ছেলেরা কহিল, “বাবা, কেন বিপদ ঘরে আনিতেছেন।” হরিহর কহিলেন, “বিপদ স্বয়ং আসিয়া আশ্রয় প্রার্থনা করিলে তাহকে ফিরাইতে পারি ୩ !” গিরিশ বসু, সাটাঙ্গে প্ৰণাম করিয়া কহিল, “ভট্টাচাৰ্যমহাশয়, আপনি আমার ঝি ভাঙাইয়া আনিলেন কেন । ঘরে কাজের ভারি অসুবিধা হইতেছে।” ইহার উত্তরে হরিহর দু-চারটে সত্য কথা খুব শক্ত করিয়াই বলিলেন । তিনি মানী লোক ছিলেন, কাহারও খাতিরে কোনো কথা ঘুরাইয়া বলিতে জানিতেন না । নায়েব মনে মনে উদগতিপক্ষ পিপীলিকার সহিত তাহার তুলনা করিয়া চলিয়া গেল । যাইবার সময় খুব ঘটা করিয়া পায়ের ধূলা লইল । দুই-চারি দিনের মধ্যেই ভট্টাচার্যের বাড়িতে পুলিসের সমাগম হইল। গৃহিণীঠাকুরানীর বালিশের নীচে হইতে নায়েবের স্ত্রীর একজোড়া ইয়ারিং বাহির হইল । কি প্যায়ী চোর সাব্যন্ত হইয়া জেলে গেল । ভট্টাচাৰ্যমহাশয় দেশবিখ্যাত প্ৰতিপত্তির জোরে চোরাই-মাল রক্ষার অভিযোগ হইতে নিকৃতি পাইলেন । নায়েব পুনশ্চ ব্ৰাহ্মণের পদধূলি লইয়া গেল। ব্ৰাহ্মণ বুঝিলেন, হতভাগিনীকে তিনি আশ্রয় দেওয়াতেই প্যারীর সর্বনাশ ঘটিল। তাহার মনে শেল বিধিয়া রহিল । ছেলেরা কহিল, “জমিজমা বেচিয়া কলিকাতায় যাওয়া যাক, এখানে বড়ো মুশকিল দেখিতেছি।”। হরিহর কহিলেন, “পৈতৃক ভিটা ছাড়িতে পারিব না, অদৃষ্টে থাকিলে বিপদ 6कथा न दdb |” ইতিমধ্যে নায়েব গ্রামে অতিমাত্রায় খাজনা বৃদ্ধির চেষ্টা করায় প্রজারা বিদ্রোহী হইল । হরিহরের সমন্ত ব্ৰক্ষোত্তর জমা, জমিদারের সঙ্গে কোনো সম্বন্ধ নাই। নায়েব তাহার প্রভুকে জানাইল, হরিহরই প্ৰজাদিগকে প্রশ্ৰয় দিয়া বিদ্রোহী করিয়া তুলিয়াছে। জমিদার কহিলেন, “যেমন করিয়া পার ভট্টাচাৰ্যকে শাসন করে।” নায়েব ভট্টাচার্যের পদধূলি লইয়া কহিল, “সামনের ঐ জমিটা পরগনার ভিটার মধ্যে পড়িতেছে ; ওটা তো ছাড়িয়া দিতে হয় ।” হরিহর কহিলেন, “সে কী কথা । ও যে আমার বহুকালের ব্ৰক্ষত্র ”। হরিহরের গৃহপ্ৰাঙ্গণের সংলগ্ন পৈতৃক জমি জমিদারের পরগনার অন্তর্গত বলিয়া নালিশ রুজু হইল । হরিহর বলিলেন, “এ জমিটা তো তবে ছাড়িয়া দিতে হয়, আমি তো বৃদ্ধ বয়সে আদালতে সাক্ষী দিতে পারিব না ।” ছেলেরা বলিল, “বাড়ির সংলগ্ন জমিটাই যদি ছাড়িয়া দিতে श्न ठोस खिbाश किद की कब्रिद्धा ।” প্ৰাণাধিক পৈতৃক ভিটার মায়ায় বৃদ্ধ কম্পিতপদে আদালতের সাক্ষ্যমকে গিয়া দাড়াইলেন । মুন্সেফ নিবগোপালবাবু তাহার সাক্ষ্যই প্রামাণ্য করিয়া মকদ্দমা ডিসমিস করিয়া দিলেন । ভট্টাচার্যের খাস প্ৰজারা ইহা লইয়া গ্রামে ভারি উৎসবসমারোহ আরম্ভ করিয়া দিল । হরিহর তাড়াতাড়ি তাহাদিগকে থামাইয়া দিলেন । নায়েব আসিয়া পরম আড়ম্বরে ভট্টাচার্যের পদধূলি লইয়া গায়ে মাথায় মাখিল এবং আপিল রুজ করিল। উকিলরা হরিহরের নিকট হইতে টাকা লন না । তাহারা ব্ৰাহ্মণকে বারংবার আশ্বাস দিলেন, এ মকদ্দমায় হারিবার কোনো সম্ভাবনা নাই । দিন কি কখনো রাত হইতে পারে । শুনিয়া হরিহর নিশ্চিন্ত হইয়া ঘরে বসিয়া রহিলেন । একদিন জমিদারি কাছারিতে ঢাকঢোল বাজিয়া উঠিল, পাঠ কাটিয়া নায়েবের বাসায় কালীপূজা হইবে । ব্যাপারখানা বঁটী । ভট্টাচাৰ্য খবর পাইলেন, আপিলে তাহার হার হইয়াছে ।