পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ ՓԳծ ভট্টাচাৰ্য মাথা চাপড়াইয়া উকিলকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “বসন্তবাবু, খ, রিলেন কী। আমার কী দশা হইবে ।” দিন যে কেমন করিয়া রাত হইল, বসন্তবাবু তাহার নিগুঢ় বৃত্তান্ত বলিলেন, “সম্প্রতি যিনি নূতন অ্যাডিশনাল জজ হইয়া আসিয়াছেন তিনি মুলেফ থাকা কালে মুলেফ নবগোপালবাবুর সহিত তাহার ভারি খিটমিটি বাধিয়াছিল। তখন কিছু করিয়া উঠিতে পারেন নাই ; আজ জজের আসনে বসিয়া নবগোপালবাবুর রায় পাইবামাত্র উলটাইয়া দিতেছেন ; আপনি হারিলেন সেইজন্য।” ব্যাকুল হরিহর কহিলেন, “হাইকোর্টে ইহার কোনো আপিল নাই ?” বসন্ত কহিলেন, “জজবাবু আপিলে ফল পাইবার সম্ভাবনা মাত্র রাখেন নাই । তিনি আপনাদের সাক্ষ্মীকে সন্দেহ করিয়া বিরুদ্ধ পক্ষের সাক্ষীকেই বিশ্বাস করিয়া গিয়াছেন । হাইকোটে তো সাক্ষীর বিচার হইবে না ।” বৃদ্ধ সাশ্রুনেত্ৰে কহিলেন, “তবে আমার উপায় ?” উকিল কহিলেন, “উপায় কিছুই দেখি না।” গিরিশ বসু পরদিন লোকজন সঙ্গে লইয়া ঘটা করিয়া ব্ৰাহ্মণের পদধূলি লইয়া গেল এবং বিদায়কালে উচ্ছসিত দীর্ঘনিশ্বাসে কহিল, “প্ৰভু, তোমারই ইচ্ছা ।” প্রতিবেশিনী আমার প্রতিবেশিনী বাল্যবিধবা । যেন শরতের শিশিরাক্ৰপুত শেফালির মতো বৃন্তচু্যত ; কোনো বাসরগুহের ফুলশয্যার জন্য সে নহে, সে কেবল দেবপূজার জন্যই উৎসর্গ করা । তাহাকে আমি মনে মনে পূজা করিতাম। তাহার প্রতি আমার মনের ভাবটা যে কী ছিল পূজা ছাড়া তাহা অন্য কোনো সহজ ভাষায় প্রকাশ করিতে ইচ্ছা করি না- পরের কাছে তো নয়ই, নিজের दpt123 न । আমার অন্তরঙ্গ প্ৰিয়বন্ধু নবীনামাধব, সেও কিছু জানিত না । এইরূপে এই যে আমার গভীরতম আবেগটিকে গোপন করিয়া নির্মল করিয়া রাখিয়াছিলাম, ইহাতে আমি কিছু গর্ব অনুভব করিতাম । কিন্তু মনের বেগ পার্বতী নদীর মতো নিজের জন্মশিখরে আবদ্ধ হইয়া থাকিতে চাহে না । কোনো একটা উপায়ে বাহির হইবার চেষ্টা করে । অকৃতকার্য হইলে বক্ষের মধ্যে বেদনার সৃষ্টি করিতে থাকে । তাই ভাবিতেছিলাম, কবিতায় ভােব প্রকাশ করিব । কিন্তু কুষ্ঠিতা লেখনী কিছুতেই অগ্রসর হইতে bांश्लि ना । পরমাশ্চর্যের বিষয় এই যে, ঠিক এই সময়েই আমার বন্ধু নবীনমাধবের অকস্মাৎ বিপুল বেগে কবিতা লিখিবার ক্টোক আসিল, যেন হঠাৎ ভূমিকম্পের মতো। সে বেচারার এরূপ দৈববিপত্তি পূর্বে কখনো হয় নাই, সুতরাং সে এই অভিনব আন্দোলনের জন্য লেশমাত্র প্রস্তুত ছিল না। তাহার হাতের কাছে ছন্দ মিল কিছুরই জোগাড় ছিল না, তবু সে দমিল না। দেখিয়া আশ্চর্য হইয়া গেলাম। কবিতা যেন বৃদ্ধ বয়সের দ্বিতীয় পক্ষের মীর মতো তাহাকে পাইয়া বসিল । নবীনামাধব ছন্দ মিল সম্বন্ধে সহায়তা ও সংশোধনের জন্য আমার শরণাপন্ন হইল । কবিতার বিষয়গুলি নূতন নছে ; অথচ পুরাতনও নহে। অর্থাৎ তাহাকে চিরনূতনও বলা যায়, চিরপুরাতন বলিলেও চলে। প্রেমের কবিতা, প্ৰিয়তমার প্রতি । আমি তাহাকে একটা ঠেলা দিয়া হাসিয়া জিজ্ঞাসা করিলাম, “কে হে, ইনি কে ।” নবীন হাসিয়া কহিল, “এখনো সন্ধান পাই নাই।” নবীন রচয়িতার সহায়তাকার্থে আমি অত্যন্ত আরাম পাইলাম। নবীনের কাল্পনিক প্ৰিয়তমার প্রতি আমার রুদ্ধ আবেগ প্রয়োগ করিলাম। শাবকহীন মুরগি যেমন ইসের ডিম পাইলেও বুক পাতিয়া তা