পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ዓ፲፭¢ነኴ.. &ኃbr(ሷ এসটিমেট কমাইবার এরূপ প্ৰথা নয়। এসটিমেটের সঙ্গে সঙ্গে কল্পনাকে খর্ব করা চারুর পক্ষে অসাধ্য এবং অমল মুখে যাহাঁই বলুক, মনে মনে তাহারও সেটা রুচিকর নয় । অমল কহিল, “তবে বউঠান, তুমি দাদার কাছে বাগানের কথাটা পাড়ো ; তিনি নিশ্চয় টাকা 0न्म {” চারু কহিল, “না, ঠাকে বললে মজা কী হল । আমরা দুজনে বাগান তৈরি করে তুলব। তিনি তো সাহেববাড়িতে ফরমাশ দিয়ে ইডেন গার্ডেন বানিয়ে দিতে পারেন- তা হলে আমাদের প্ল্যানের কী शद ।” আমড়া গাছের ছায়ায় বসিয়া চারু এবং অমল অসাধ্য সংকল্পের কল্পনাসুখ বিস্তার করিতেছিল। চারুর ভাজ মন্দা দোতলা হইতে ডাকিয়া কহিল, “এত বেলায় বাগানে তোরা কী করছিস ।” চারু কহিল, “পাকা আমড়া খুঁজছি।” gলুৱা মন্দা কহিল, “পাস যদি আমার জন্যে আনিস ।” চারু। হাসিল, অমল হাসিল । তাহদের সমন্ত সংকল্পগুলির প্রধান সুখ এবং গীেরব এই ছিল যে, সেগুলি তাহদের দুজনের মধ্যেই আবদ্ধ । মন্দার আর যা-কিছু গুণ থাক, কল্পনা ছিল না ; সে এ-সকল প্রস্তাবের রস গ্ৰহণ করিবে কী করিয়া । সে এই দুই সভ্যোর সকলপ্রকার কমিটি হইতে 0ष्कवान दईिठ । অসাধ্য বাগানের এসটিমোেটও কমিল না, কল্পনাও কোনো অংশে হার মানিতে চাহিল না । সুতরাং আমড়াতলার কমিটি এইভাবেই কিছুদিন চলিল। বাগানের যেখানে কিল হইবে, যেখানে হরিণের ঘর হইবে, যেখানে পাথরের বেদী হইবে, অমল সেখানে চিহ্ন কাটিয়া রাখিল । তাহাদের সংকল্পিত বাগানে এই আমড়াতলার চার দিক কী ভাবে বাধাইতে হইবে, আমল একটি ছোটো কোদাল লইয়া তাহারই দাগ কাটিতেছিল- এমন সময় চারু গাছের ছায়ায় বসিয়া বলিল, “অমল, তুমি যদি লিখতে পারতে তা হলে বেশ হত ।” অমল জিজ্ঞাসা করিল, “কোন বেশ হত ।” চারু । তা হলে আমাদের এই বাগানের বর্ণনা করে তোমাকে দিয়ে একটা গল্প লেখাতুম। এই ঝিল, এই হরিণের ঘর, এই আমড়াতলা, সমন্তই তাতে থাকত- আমরা দুজনে ছাড়া কেউ বুঝতে পারত না, বেশ মজা হত । অমল, তুমি একবার লেখবার চেষ্টা করে দেখো-না, নিশ্চয় তুমি পারবে । অমল কহিল, “আচ্ছা, যদি লিখতে পারি তো আমাকে কী দেবে ।” চারু কহিল, “তুমি কী চাও।” অমল কহিল, “আমার মশারির চালে আমি নিজে লতা ঐকে দেব, সেইটে তোমাকে আগাগোড়া রেশম দিয়ে কাজ করে দিতে হবে ।” চারু কহিল, “তোমার সমন্ত বাড়াবাড়ি । মশারির চালে আবার কাজ !” মশারি জিনিসটাকে একটা শ্ৰীহীন কারাগারের মতো করিয়া রাখার বিরুদ্ধে অমল অনেক কথা বলিল। সে কহিল, সংসারের পনেরো-আনা লোকের যে সৌন্দৰ্যবোধ নাই এবং কুগ্ৰীতা তাহদের কাছে কিছুমাত্র পীড়াকর নহে। ইহাই তাহার প্রমাণ । চারু সে কথা তৎক্ষণাৎ মনে মনে মানিয়া লইল এবং “আমাদের এই দুটি লোকের নিভৃত কমিটি যে সেই পনেরো-আনার অন্তর্গত নহে। ইহা মনে করিয়া সে খুশি হইল । কহিল, “আচ্ছ বেশ, আমি মশারির চাল তৈরি করে দেব, তুমি লেখো।" অমল রহস্যপূর্ণভাবে কহিল, “তুমি মনে কয়, আমি লিখতে পারি। নে ?” চারু অত্যন্ত উত্তেজিত হইয়া কহিল, “তবে নিশ্চয় তুমি কিছু লিখেছি, আমাকে দেখাও।” অমল। আজ থাক, বউঠান । চারু । না, আজই দেখাতে হবে- মাথা খাও, তোমার লেখা নিয়ে এসো গে । চারুকে তাহার লেখা শোনাইবার অতিব্যগ্ৰতাতেই অমলকে এতদিন বাধা দিতেছিল। পাছে চারু না