পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

QSO রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী তাহার প্রতি মনে মনে ভূপতির একটা শ্ৰদ্ধা ছিল। ভূপতি ভাবিত, ‘বলিবার কথা কিছুই নাই। অথচ এত কথা অনর্গল বানাইয়া বলা সে তো আমি মাথা কুটিয়া মরিলেও পারিতাম না। অমলের পেটে যে এত ক্ষমতা ছিল তাহা কে জানিত ।” ভূপতি নিজের রসজ্ঞতা অস্বীকার করিত কিন্তু সাহিত্যের প্রতি তাহার কৃপণতা ছিল না। দরিদ্র লেখক তাহাকে ধরিয়া পড়িলে বই ছাপিবার খরচ ভূপতি দিত, কেবল বিশেষ করিয়া বলিয়া দিত, “আমাকে যেন উৎসর্গ করা না হয় ।” বাংলা ছোটাে বড়ো সমান্ত সাপ্তাহিক এবং মাসিক পত্র, খ্যাত আখ্যাত পাঠ্য অপাঠ্য সমস্ত বই সে কিনিত । বলিত, “একে পড়ি না, তার পরে যদি না কিনি। তবে পাপীও করিব প্ৰায়শ্চিত্তও হইবে না।” পড়িত না বলিয়াই মন্দ বইয়ের প্রতি তাহার লেশমাত্র বিদ্বেষ ছিল না, সেইজন্য তাহার বাংলা লাইব্রেরি গ্রন্থে পরিপূর্ণ ছিল । অমল ভূপতির ইংরেজি প্রফ-সংশোধন-কার্যে সাহায্য করিত ; কোনো-একটা কাপির দুর্বোধ্য হস্তাক্ষর দেখাইয়া লইবার জন্য সে একতাড়া কাগজপত্র লইয়া ঘরে ঢুকিল । ভূপতি হাসিয়া কহিল, “অমল, তুমি আষাঢ়ের চাঁদ আর ভাদ্র মাসের পাকা তালের উপর যতখুশি লেখো, আমি তাতে কোনো আপত্তি করি নে- আমি কারও স্বাধীনতায় হাত দিতে চাই নে- কিন্তু আমার স্বাধীনতায় কেন হন্তক্ষেপ । সেগুলো আমাকে না পড়িয়ে ছাড়বেন না, তোমার বোঠানের এ কী অত্যাচার ।” অমল হাসিয়া কহিল, “তই তো বোঠান- আমার লেখাগুলো নিয়ে তুমি যে দাদাকে জুলুম করবার উপায় বের করবে, এমন জানলে আমি লিখাতুম না ।” সাহিত্যরসে বিমুখ ভূপতির কাছে আনিয়া তাহার অত্যন্ত দরদের লেখাগুলিকে অপদস্থ করাতে অমল মনে মনে চারুর উপর রাগ করিল এবং চারু তৎক্ষণাৎ তাহা বুঝিতে পারিয়া বেদনা পাইল । কথাটাকে অন্য দিকে লইয়া যাইবার জন্য ভূপতিকে কহিল, “তোমার ভাইটির একটি বিয়ে দিয়ে দাও দেখি, তা হলে আর লেখার উপদ্রব সহ্য করতে হবে না ।” ভূপতি কহিল, “এখনকার ছেলেরা আমাদের মতো নির্বোিধ নয় । তাদের যত কবিত্ব লেখায়, কাজের বেলায় সেয়ানা । কই, তোমার দেওরকে তো বিয়ে করতে রাজি করাতে পারলে না ।” চারু চলিয়া গেলে ভূপতি অমলকে কহিল, “আমল, আমাকে এই কাগজের হাঙ্গামে থাকতে হয়, চারু বেচারা বড়ো একলা পড়েছে । কোনো কাজকর্ম নেই, মাঝে মাঝে আমার এই লেখবার ঘরে উকি মেরে চলে যায় । কী করব বলে । তুমি, অমল, ওকে একটু পড়াশুনোয় নিযুক্ত রাখতে পারলে ভালো হয় । মাঝে মাঝে চারুকে যদি ইংরেজি কাব্য থেকে তর্জমা করে শোনাও তা হলে ওর উপকারও হয়, ভালোও লাগে । চারুর সাহিত্যে বেশ রুচি আছে ।” অমল কহিল, “তা আছে । বৌঠান যদি আরো একটু পড়াশুনো করেন তা হলে আমার বিশ্বাস উনি নিজে বেশ ভালো লিখতে পারবেন ।” ভূপতি হাসিয়া কহিল, “ততটা আশা করি নে, কিন্তু চারু বাংলা লেখার ভালোমন্দ আমার চেয়ে ঢের বুঝতে পারে।” অমল । ওর কল্পনাশক্তি বেশ আছে, স্ত্রীলোকের মধ্যে এমন দেখা যায় না । ভূপতি । পুরুষের মধ্যেও কম দেখা যায়, তার সাক্ষী আমি । আচ্ছা, তুমি তোমার বউঠাকরুনকে যদি গড়ে তুলতে পার আমি তোমাকে পারিতোষিক দেব । ठळत । कैी (प्रांत उनि । ভূপতি । তোমার বউঠাকরুনের জুড়ি একটি খুঁজে-পেতে এনে দেব । অমল ! আবার তাকে নিয়ে পড়তে হবে ! চিরজীবন কি গড়ে তুলতেই কটাব । দুটি ভাই আজকালকার ছেলে, কোনো কথা তাহদের মুখে বাধে না ।