পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

NSON) 8 রবীন্দ্র-রচনাবলী বেচারা দাদা । তিনি তাহার স্বামীর কাগজ লইয়া দিন রাত খাটিয়া মরিতেছেন, আর মন্দা কিনা কোণটিতে বসিয়া অমলকে ভুলাইবার জন্য আয়োজন করিতেছে। দাদা বেশ নিশ্চিন্ত আছেন । মন্দার উপরে তার অগাধ বিশ্বাস । এ-সকল ব্যাপার চারু কী করিয়া স্বচক্ষে দেখিয়া স্থির থাকিবে । ভারি जel । কিন্তু আগে অমল বেশ ছিল, যেদিন হইতে লিখিতে আরম্ভ করিয়া নাম করিয়াছে সেই দিন হইতেই যত অনর্থ দেখা যাইতেছে । চারুই তো তাহার লেখার গোড়া । কুক্ষণে সে অমলকে রচনায় উৎসাহ দিয়াছিল। এখন কি আর আমলের পরে তাহার পূর্বের মতো জোর খাটিবে । এখন অমল পাচজনের আদরের স্বাদ পাইয়াছে, অতএব একজনকে বাদ দিলে তাহার আসে যায় না । চারু স্পষ্টই বুঝিল, তাহার হাত হইতে গিয়া পাঁচজনের হাতে পডিয়া অমলের সমূহ বিপদ । চারুকে অমল এখন নিজের ঠিক সমকক্ষ বলিয়া জানে না ; চারুকে সে ছাড়াইয়া গেছে । এখন সে লেখক, চারু পাঠক । ইহার প্রতিকার করিতেই হইবে । আহা, সরল অমল, মায়াবিনী মন্দা, বেচারা দাদা । ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ সেদিন আষাঢ়ের নবীন মেঘে আকাশ আচ্ছন্ন ।। ঘরের মধ্যে অন্ধকার ঘনীভূত হইয়াছে বলিয়া চারু তাহার খোলা জানালার কাছে একান্ত ঝুঁকিয়া পডিয়া কী একটা লিখিতেছে। অমল কখন নিঃশব্দপদে পশ্চাতে আসিয়া দাড়াইল তাহা সে জানিতে পারিল না । বাদলার জিপ্ত আলোকে চারু লিখিয়া গেল, অমল পড়িতে লাগিল । পাশে আমলেরই দুই-একটা ছাপানো লেখা খোলা পডিয়া আছে ; চারুর কাছে সেইগুলিই রচনার একমাত্র আদর্শ । “ তবে যে বল, তুমি লিখতে পার না !” হঠাৎ অমলের কণ্ঠ শুনিয়া চারু অত্যন্ত চমকিয়া উঠিল ; তাড়াতাড়ি খাতা লুকাইয়া ফেলিল ; কহিল, “তোমার ভারি অন্যায় ।” অমল । কী অন্যায় করেছি । চারু । নুকিয়ে নুকিয়ে দেখছিলে কেন । অমল । প্রকাশ্যে দেখতে পাই নে বলে । চারু তাহার লেখা ছিডিয়া ফেলিবার উপক্রম করিল। অমল ফস করিয়া তাহার হাত হইতে খাতা কাডিয়া লইল, চারু কহিল, “তুমি যদি পড় তোমার সঙ্গে জন্মের মতো আড়ি ।” অমল । যদি পড়তে বারণ কর তা হলে তোমার সঙ্গে জন্মের মতো আড়ি । চারু । আমার মাথা খাও ঠাকুরপো, পোড়ো না । অবশেষে চারুকেই হার মানিতে হইল। কারণ, অমলকে তাহার লেখা দেখাইবার জন্য মন ছটফট করিতেছিল, অথচ দেখাইবার বেলায় যে তাহার এত লজা করিবে তাহ সে ভাবে নাই । অমল যখন অনেক অনুনয় করিয়া পড়িতে আরম্ভ করিল। তখন লােজায় চারুর হাত-পা বরফের মতো হিম হুইয়া গেল । কহিল, “আমি পান নিয়ে আসি গে।” বলিয়া তাড়াতাড়ি পাশের ঘরে পান সাজিবার উপলক্ষ করিয়া চলিয়া গেল । অমল পড়া সাঙ্গ করিয়া চারুকে গিয়া কহিল, “চমৎকার হয়েছে।” চারু পানে খায়ের দিতে ভুলিয়া কহিল, “যাও, আর ঠাট্টা করতে হবে না । দাও, আমার খাতা ሻTS !” অমল কহিল, “খাতা এখন দেব না, লেখাটা কপি করে নিয়ে কাগজে পাঠাব।” চারু । ইয়া, কাগজে পাঠাবে বৈকি ! সে হবে না । চারু ভারি গোলমাল করিতে লাগিল । অমিলও কিছুতে ছড়িল না । সে যখন বায় যায় শপথ করিয়া কহিল “কাগজে দিবার উপযুক্ত হইয়াছে।” তখন চারু যেন নিতান্ত হতাশ হুইয়া কহিল, “তোমায়