পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

冗3两 8O 。 অমল গভীর হইয়া চুপ করিয়া রহিল । মন্দা কহিল, “ছি ছি, কী লজ্জা । বাবু কী মনে করলেন ।” আমল এ কথা লইয়া আর অধিক আলোচনা করিল না । এটুকু স্থির করিল, চারু তাহদের সম্বন্ধে দাদার কাছে এমন কথা বলিয়াছে যাহা বলিবার নাহে । অমল বাডি হইতে বাহির হইয়া রাস্তায় বেড়াইতে লাগিল। তাহার ইচ্ছা হইল এ বাড়িতে আর ফিবিয়া না আসে । দাদা যদি বোঠানের কথায় বিশ্বাস করিয়া তাহাকে অপরাধী মনে করিয়া থাকেন, তবে মন্দা যে পথে গিয়াছে তাহাকেও সেই পথে যাইতে হয় । মন্দাকে বিদায় এক হিসাবে অমলের প্রতিও নির্বাসনের আদেশ- সেটা কেবল মুখ ফুটিয়া বলা হয় নাই মাত্র । ইহার পরে কর্তব্য খুব সুস্পষ্ট-- আর একদণ্ডও এখানে থাকা নয় । কিন্তু দাদা যে তাহার সম্বন্ধে কোনোপ্রকার অন্যায় ধারণা মনে মনে পোষণ করিয়া রাখিবেন সে হইতেই পারে না । এতদিন তিনি অক্ষয় বিশ্বাসে তাহাকে ঘরে স্থান দিয়া পালন করিয়া আসিতেছেন, সে বিশ্বাসে যে অমল কোনো অংশে আঘাত দেয় নাই সে কথা দাদাকে না বুঝাইয়া সে কেমন করিয়া যাইবে । ভূপতি তখন আত্নীয়ের কৃতঘাত, পাওনাদারের তাড়না, উচ্ছম্বল হিসাবপত্র এবং শূন্য তহবিল লাইযা মাথায় হাত দিয়া ভাবিতেছিল । তাহার এই শুষ্ক মনোদুঃখের কেহ দোসর ছিল না- চিত্তবেদনা এবং ঋণের সঙ্গে একলা দাডাইয়া যুদ্ধ করিবার জন্য ভূপতি প্ৰস্তুত হইতেছিল। এমন সময় অমল ঝডেব মতো ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিল। ভূপতি নিজের অগাধ চিন্তার মধ্য হইতে হঠাৎ চমকিয়া উঠিয়া চাহিল । কহিল, “খবর কী আমল ।” অকস্মাৎ মনে হইল, অমল বুঝি আর একটা কী গুরুতব দুঃসংবাদ লইয়া আসিল । অমল কহিল, “দাদা, আমার উপরে তোমার কি কোনোরকম সন্দেহের কারণ হয়েছে।” ভূপতি আশ্চর্য হইয়া কহিল, “তোমাব উপরে সন্দেহ ?” মনে মনে ভাবিল, “সংসার যেরূপ দেখিতেছি তাহাতে কোনোদিন অমলকেও সন্দেহ করিব আশ্চর্য নাই ।” অমল ! বোঠান কি আমার চরিত্রসম্বন্ধে তোমার কাছে কোনোরকম দোষারোপ করেছেন । ভূপতি ভাবিল, ওঃ, এই ব্যাপার । বাচা গেল। স্নেহের অভিমান । সে মনে করিয়াছিল, সর্বনাশের উপব বুঝি আর-একটা কিছু সর্বনাশ ঘটিয়াছে, কিন্তু গুরুতর সংকটের সময়েও এই-সকল তুচ্ছ বিষয়ে কৰ্ণপাত কবিতে হয় । সংসার এ দিকে সাকেও নাড়াইবে অথচ সেই সাকোর উপর দিয়া তাহার শাকের আর্টিগুলো পার করিবার জন্য তাগিদ করিতেও ছাড়িবে না । অন্য সময় হইলে ভূপতি অমলকে পরিহাস করিত, কিন্তু আজ তাহার সে প্রফুল্লতা ছিল না । সে বলিল, “পাগল হয়েছ নাকি ৷” অমল আবার জিজ্ঞাসা করিল, “বোঠােন কিছু বলেন নি ?” ভূপতি ! তোমাকে ভালোবাসেন বলে যদি কিছু বলে থাকেন তাতে রাগ করবার কোনো কারণ ( অমল । কাজকর্মের চেষ্টায় এখন আমার অন্যত্র যাওয়া উচিত । ভূপতি ধমক দিয়া কহিল, “অমল, তুমি কী ছেলেমানুষিা করছি তার ঠিক নেই। এখন পড়াশুনো করো, কাজকর্ম পরে হবে ।” অমল বিমর্ষমুখে চলিয়া আসিল, ভূপতি তাহার কাগজের গ্রাহকদের মূল্যপ্রাপ্তির তালিকার সহিত তিন বৎসরের জমাখরচের হিসাব মিলাইতে বসিয়া গেল । দশম পরিচ্ছেদ অমল স্থির করিল, বউঠানের সঙ্গে মোকাবিলা করিতে হইবে, এ কথাটার শেষ না করিয়া ছাড়া হইবে না । বোঠানকে যে-সকল শক্ত শক্ত কথা শুনাইবে মনে মনে তাহা আবৃত্তি করিতে লাগিল । মন্দা চলিয়া গেলে চারু সংকল্প করিল, অমলকে সে নিজে হইতে ডাকিয়া পঠাইয়া তাহার