পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ና፲፮s&ጂ 8のぬ চলিবে । মনে করিয়াছিল, যে-সকল ঘোরো সুখ সব চেয়ে সুলভ অথচ সুন্দর, সর্বদাই নাড়াচাড়ার যোগ্য অথচ পবিত্র নির্মল, সেই সহজলভ্য সুখগুলির দ্বারা তাহার জীবনের গৃহকোণটিতে সন্ধ্যাপ্ৰদীপ জ্বালাইয়া নিভৃত শান্তির অবতারণা করিবে । হাসি গল্প পরিহাস, পরম্পরের মনোরঞ্জনের জন্য প্রত্যহ ছোটােখাটাে আয়োজন, ইহাতে অধিক চেষ্টা আবশ্যক হয় না। অথচ সুখ অপর্যাপ্ত হইয়া উঠে । কার্যকালে দেখিল, সহজ সুখ সহজ নহে । যাহা মূল্য দিয়া কিনিতে হয় না। তাহা যদি আপনি হাতের কাছে না পাওয়া যায়। তবে আর কোনোমতেই কোথাও খুজিয়া পাইবার উপায় থাকে না । ভূপতি কোনোমতেই চারুর সঙ্গে বেশ করিয়া জমাইয়া লইতে পারিল না । ইহাতে সে নিজেকেই দোষ দিল । ভাবিল, ‘বারো বৎসর কেবল খবরের কাগজ লিখিয়া, স্ত্রীর সঙ্গে কী করিয়া গল্প করিতে হয় সে বিদ্যা একেবারে খোয়াইয়াছি।” সন্ধ্যাদীপ জ্বালিতেই ভূপতি আগ্রহের সহিত ঘরে যায়- সে দুই-একটা কথা বলে, চারু দুই-একটা কথা বলে, তার পরে কী বলিবে ভূপতি কোনোমতেই ভাবিয়া পায় না । নিজের এই অক্ষমতায় স্ত্রীর কাছে সে লজা বোধ করিতে থাকে । স্ত্রীকে লইয়া গল্প করা সে এতই সহজ মনে করিয়াছিল। অথচ মূঢ়ের নিকট ইহা এতই শক্ত ! সভাস্থলে বক্তৃতা করা ইহার চেয়ে क्रा छ | :. যে সন্ধ্যাবেলাকে ভূপতি হাস্যে কৌতুকে প্ৰণয়ে আদরে রমণীয় করিয়া তুলিবে কল্পনা করিয়াছিল, সেই সন্ধাবেলা কাটানো তাহাদের পক্ষে সমস্যার স্বরূপ হইয়া উঠিল। কিছুক্ষণ চেষ্টপূর্ণ মীেনের পর ভূপতি মনে করে “উঠিয়া যাই'- কিন্তু উঠিয়া গেলে চারু কী মনে করিবে এই ভাবিয়া উঠিতেও পারে না । বলে, “চারু, তাস খেলবে ?” চারু অন্য কোনো গতি না দেখিয়া বলে, আচ্ছা । বলিয়া অনিচ্ছাক্রমে তাস পাডিয়া আনে, নিতান্ত ভুল করিয়া অনায়াসেই হরিয়া যায়- সে খেলায় কোনো मृश् थांत ना ! ভূপতি অনেক ভাবিয়া একদিন চারুকে জিজ্ঞাসা করিল, “চারু, মন্দাকে আনিয়া নিলে হয় না ? তুমি নিতান্ত একলা পড়েছি।” চারু মন্দার নাম শুনিয়াই জ্বলিয়া উঠিল । বলিল, “না, মন্দাকে আমার দরকার নেই।” ভূপতি হাসিল । মনে মনে খুশি হইল। সাধবীরা যেখানে সতীধর্মের কিছুমাত্র ব্যতিক্রম দেখে সেখানে ধৈর্য রাখিতে পারে না । বিদ্বেষের প্রথম ধাক্কা সামলাইয়া চারু ভাবিল, মন্দা থাকিলে সে হয়তো ভূপতিকে অনেকটা আমোদে রাখিতে পরিবে । ভূপতি তাহার নিকট হইতে যে মনের সুখ চায় সে তাহা কোনোমতে দিতে পারিতেছে না, ইহা চারু অনুভব করিয়া পীড়া বোধ করিতেছিল। ভূপতি জগৎসংসারের আর-সমন্ত ছাড়িয়া একমাত্র চারুর নিকট হইতেই তাহার জীবনের সমন্ত আনন্দ আকর্ষণ করিয়া লইতে চেষ্টা করিতেছে, এই একাগ্ৰ চেষ্টা দেখিয়া ও নিজের অন্তরের দৈন্য উপলব্ধি করিয়া চারু ভীত হইয়া পড়িয়াছিল। এমন করিয়া কতদিন কিরূপে চলিবে । ভূপতি আর কিছু অবলম্বন করে না কেন । আর-একটা খবরের কাগজ চালায় না কেন । ভূপতির চিত্তরঞ্জন করিবার অভ্যাস এ পর্যন্ত চারুকে কখনো করিতে হয় নাই, ভূপতি তাহার কাছে কোনো সেবা দাবি করে নাই, কোনো সুখ প্রার্থনা করে নাই, চারুকে সে সর্বতোভাবে নিজের প্রয়োজনীয় করিয়া তোলে নাই ; আজি হঠাৎ তাহার জীবনের সমস্ত প্রয়োজন চারুর নিকট চাহিয়া বসাতে সে কোথাও কিছু যেন খুজিয়া পাইতেছে না। ভূপতির কী চাই, কী হইলে সে তৃপ্ত হয়, তাহা চারু ঠিকমত জানে না এবং জানিলেও তাহা চারুর পক্ষে সহজে अग्रभा न८ ।। ভূপতি যদি অল্পে অল্পে অগ্রসর হইত। তবে চারুর পক্ষে হয়তো এত কঠিন হইত না। কিন্তু হঠাৎ এক রাত্ৰে দেউলিয়া হইয়া রিক্ত ভিক্ষাপাত্ৰ পাতিয়া বসাতে সে যেন বিব্রত হইয়াছে। চারু কহিল, “আচ্ছা, মন্দাকে আনিয়ে নাও, সে থাকলে তোমার দেখাশুনোর অনেক সুবিধে হতে পারবে ।” ভূপতি হাসিয়া কহিল, “আমার দেখাশুনো ! কিছু দরকার নেই।”