8S 8 রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী চারু । না, অসুখ না, জােনই তো তুমি গেলে তারা কত খুশি হয় । ভূপতি চারুর অনুরোধে গাড়ি চড়িয়া হাবড়া-স্টেশন-অভিমুখে ছুটিল । পথে একসার গোরুব গাড়ি আসিয়া তাহার গাড়ি আটক করিল। এমন সময় পরিচিত টেলিগ্রাফের হরকরা ভূপতিকে দেখিয়া তাহার হাতে একখানা টেলিগ্রাফ লইয়া দিল । বিলাতের টেলিগ্রাম দেখিয়া ভূপতি ভারি ভয় পাইল। ভাবিল, অমলের হয়তো অসুখ করিয়াছে । ভয়ে ভয়ে খুলিয়া দেখিল টেলিগ্রামে লেখা আছে, “আমি ভালো আছি ।” ইহার অর্থ কী ; পরীক্ষা করিয়া দেখিল, ইহা শ্ৰী-পেড টেলিগ্রামের উত্তর { হাওড়া যাওয়া হইল না । গাডি ফিরাইয়া ভূপতি বাড়ি আসিয়া স্ত্রীর হাতে টেলিগ্রাম দিল। ভূপতির হাতে টেলিগ্রাম দেখিয়া চারুর মুখ পাংশুবৰ্ণ হইয়া গেল । ভূপতি কহিল, “আমি এর মানে কিছুই বুঝিতে পারছি নে ৷” অনুসন্ধানে ভূপতি মানে বুঝিল । চারু নিজের গহনা বন্ধক রাখিয়া টাকা ধার করিয়া টেলিগ্ৰাফ পাঠাইয়াছিল । ভূপতি ভাবিল, এত করিবার তো দরকার ছিল না । আমাকে একটু অনুরোধ করিয়া ধরিলেই তো আমি টেলিগ্ৰাফ করিয়া দিতাম, চাকরকে দিয়া গোপনে বাজারে গহনা বন্ধক দিতে পাঠানো- এ তো ভালো হয় নাই ; থাকিয়া থাকিয়া ভূপতির মনে কেবলই এই প্রশ্ন হইতে লাগিল, চারু কেন এত বাড়াবাডি করিল ! একটা অস্পষ্ট সন্দেহ অলক্ষ্যভাবে তাহাকে বিদ্ধ করিতে লাগিল । সে সন্দেহটাকে ভূপতি প্রত্যক্ষভাবে দেখিতে চাহিল না, ভুলিয়া থাকিতে চেষ্টা করিল, কিন্তু বেদনা কোনোমতে ছাডিল না । উনবিংশ পরিচ্ছেদ অমলের শরীর ভালো আছে, তবু সে চিঠি লেখে না ! একেবারে এমন নিদারুণ ছাড়াছাডি হইল কী করিয়া ! একবার মুখোমুখি এই প্রশ্নটার জবাব লইয়া আসিতে ইচ্ছা হয়, কিন্তু মধ্যে সমুদ্ৰ— পার হইবার কোনো পথ নাই ! নিষ্ঠুর বিচ্ছেদ, নিরুপায় বিচ্ছেদ, সকল প্রশ্ন সকল প্ৰতিকারের অতীত বিচ্ছেদ । চারু আপনাকে আর খাড়া রাখিতে পারে না । কাজকর্ম পডিয়া থাকে, সকল বিষয়েই ভুল হয়, এমনি হইল, হঠাৎ চারু চমকিয়া উঠিত, কথা কহিতে কহিতে তাহাকে কান্দিবার জন্য উঠিয়া যাইতে হইত, অমলের নাম শুনিবা মাত্র তাহার মুখ বিবৰ্ণ হইয়া যাইত । অবশেষে ভূপতি ও সমস্ত দেখিল, এবং যাহা মুহুর্তের জন্য ভাবে নাই তাহাও ভাবিলে- সংসার একেবারে তাহার কাছে বৃদ্ধ শুষ্ক জীৰ্ণ হইয়া গেল । মাঝে যে-কয়দিন আনন্দের উন্মেষে ভূপতি অন্ধ হইয়াছিল সেই কয়দিনের স্মৃতি তাহাকে লজ্জা দিতে লাগিল । যে অনভিজ্ঞ বানর জহর চেনে না। তাহাকে খুঁটা পাথর দিয়া কি এমনি করিয়াই 2कॉट ट्य । 哪
