পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 Y V রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী বিংশ পরিচ্ছেদ বন্ধুরা ভূপতিকে জিজ্ঞাসা করিল, “ব্যাপারখানা কী । এত ব্যন্ত কেন ।” ভূপতি কহিল, “খবরের কাগজ-” বন্ধু । আবার খবরের কাগজ ? ভিটেমাটি খবরের কাগজে মুড়ে গঙ্গার জলে ফেলতে হবে নাকি । ভূপতি । না, আর নিজে কাগজ করছি নে । বন্ধু ! তবে ? ভূপতি । মৈশুরে একটা কাগজ বের হবে, আমাকে তার সম্পাদক করেছে । বন্ধু । বাড়িঘর ছেড়ে একেবারে মৈশুরে যাবে ? চারুকে সঙ্গে নিয়ে যােচ্ছ ? ভূপতি । না, মামারা এখানে এসে থাকবেন । বন্ধু । সম্পাদক নেশা তোমার আর কিছুতেই ছুটিল না । ভূপতি । মানুষের যা হােক একটা কিছু নেশা চাই । বিদায়কালে চারু জিজ্ঞাসা করিল, “কবে আসবে ?” ভূপতি কহিল, “তোমার যদি একলা বোধ হয়, আমাকে লিখো, আমি চলে আসিব ।” বলিয়া বিদায় লইয়া ভূপতি যখন দ্বারের কাছ পর্যন্ত আসিয়া পৌছিল তখন হঠাৎ চারু, ছুটিয়া আসিয়া তাহার হাত চাপিয়া ধরিল, কহিল, “আমাকে সঙ্গে নিয়ে যাও । আমাকে এখানে ফেলে রেখে GR3 a " ভূপতি থমকিয়া দাড়াইয়া চারুর মুখের দিকে চাহিয়া রহিল। মুষ্টি শিথিল হইয়া ভূপতির হাত হইতে চারুর হাত খুলিয়া আসিল । ভূপতি চারুর নিকট হইতে সরিয়া বারান্দায় আসিয়া দাড়াইল । ভূপতি বুঝিল, অমলের বিচ্ছেদস্মৃতি যে বাড়িকে বেষ্টন করিয়া জ্বলিতেছে চারু দাবানলগ্রান্ত হরিণীর মতো সে বাড়ি পরিত্যাগ করিয়া পালাইতে চায় ।- "কিন্তু, আমার কথা সে একবার ভাবিয়া দেখিল না ? আমি কোথায় পলাইব । যে স্ত্রী হৃদয়ের মধ্যে নিয়ত অন্যকে ধ্যান করিতেছে, বিদেশে গিয়াও তাহাকে ভুলিতে সময় পাইব না ? নির্জন বন্ধুহীন প্রবাসে প্রত্যহ তাহাকে সঙ্গদান করিতে হইবে ? সমস্তদিন পরিশ্রম করিয়া সন্ধ্যায় যখন ঘরে ফিরিব তখন নিস্তািন্ধ শোকপরায়ণা নারীকে লইয়া সেই সন্ধ্যা কী ভয়ানক হইয়া উঠিবে। যাহার অন্তরের মধ্যে মৃতভার তাহাকে বক্ষের কাছে ধরিয়া রাখা, সে আমি কতদিন পারিব । আরো কত বৎসর প্রত্যহ আমাকে এমনি করিয়া বাচিতে হইবে । যে আশ্রয় চূৰ্ণ হইয়া ভাঙিয়া গেছে তাহার ভাঙা ইটকাঠগুলা ফেলিয়া যাইতে পারিব না, কাধে করিয়া বহিয়া বেড়াইতে হইবে ?” ভূপতি চারুকে আসিয়া কহিল, “না, সে আমি পারিব না।” মুহুর্তের মধ্যে সমস্ত রক্ত নামিয়া গিয়া চারুর মুখ কাগজের মতো শুষ্ক সাদা হইয়া গেল, চারু মুঠা করিয়া খাট চাপিয়া ধরিল । তৎক্ষণাৎ ভূপতি কহিল, “চলো চারু, আমার সঙ্গেই চলো ।” চারু বলিল, “না, থাকা ।” বৈশাখ-আগ্রহায়ণ ১৩০৮ দপহরণ কী করিয়া গল্প লিখিতে হয়, তাহা সম্প্রতি শিখিয়াছি। বঙ্কিমবাবু এবং সার ওয়ালটার স্কট পড়িয়া আমার বিশেষ ফল হয় নাই । ফল কোথা হইতে কেমন করিয়া হইল, আমার এই প্ৰথম গল্পেই সেই কথাটা লিখিতে বসিলাম ।