পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 S 8 রবীন্দ্র-রচনাবলী পটল । তবে এসো : যতীন । কোথায় যাইব । পটল । এসোই-না । যতীন । না না, একটা কী দুষ্টুমি তোমার মাথায় আসিয়াছে । আমি এখন নডিতেছি না । পটল । আচ্ছা, তবে এইখানেই বোসো ।- বলিয়া সে দ্রুত পদে প্ৰস্থান কবিল । পরিচয় দেওয়া যাক ।। যতীন এবং পটলের বয়সের একদিন মাত্র তারতম্য । পটল যতীনের চেয়ে একদিনের বড়ো বলিয়া যতীন তাহার প্রতি কোনোপ্রকার সামাজিক সম্মান দেখাইতে নারাজ । উভয়ে খুড়তুতো-জাঠতুতো ভাইবােন । বরাবর একত্রে খৈল কবিয়া আসিয়াছে । "দিদি" বলে না বলিয়া পটল যতীনের নামে বাল্যকালে বাপ-খুড়ার কাছে অনেক নালিশ কবিয়াছে, কিন্তু কোনো শাসনবিধির দ্বারা কোনো ফল পায় নাই- একটিমাত্র ছোটাে ভাইয়ের কাছেও তাহার পটাল-নাম ঘুচিল না । পটল দিবা মোটাসোটা গোলগাল, প্রফুল্লতার রসে পরিপূর্ণ । তাহার কৌতুকহাসা দমন করিয়া রাখে, সমাজে এমন কোনো শক্তি ছিল না ; শাশুডির কাছেও সে কোনোদিন গাম্ভীৰ্য অবলম্বন করিতে পারে নাই। প্রথম-প্ৰথম তা লইয়া অনেক কথা উঠিযাছিল । কিন্তু, শেষকালে সকলকেই হার মানিয়া বলিতে হইল- ওর ঐ রকম । তার পরে এমন হইল যে, পটলের দুনিবার প্রফুল্লতার আঘাতে গুরুজনদের গান্তীর্য ধূলিসাৎ হইয়া গেল । পটল তাহাব আশেপাশে কোনোখানে মন-ভার মুখ-ভার দুশ্চিন্তা সহিতে পারিত না- অজস্র গল্প-হাসি-ঠাট্টায় তাহার চাবি দিকের হাওয়া যেন বিদ্যুৎশক্তিতে বোঝাই হইয়া থাকিত । পটলের স্বামী হরকুমারবাবু ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট- বেহার-অঞ্চল হইতে বদলি হইয়া কলিকাতায় আবকারি-বিভাগে স্থান পাইয়াছেন । প্লেগের ভয়ে বালিতে একটি বাগানবাডি ভাড়া লইয়া থাকেন, সেখান হইতে কলিকাতায় যাতায়াত করেন ; আবকারি-পরিদর্শনে প্রায়ই তাহাকে মফস্বলে ফিরিতে হইবে বলিয়া দেশ হইতে মা এবং অন্য দুই-একজন আখীয়কে আনিবার উপক্রম করিতেছেন, এমন সময় ডাক্তারিতে নূতন-উত্তীর্ণ পসারপ্রতিপত্তিহীন যতীন বোনের নিমন্ত্রণে হগুপ্তাখানেকের জন্য এখানে আসিয়াছে । কলিকাতার গলি হইতে প্ৰথম দিন গাছপালার মধ্যে আসিয়া যতীন ছায়াময় নির্জন বারান্দায় ফালুন-মধ্যাহ্নের রসালস্যে আবিষ্ট হইয়া বসিয়া ছিল, এমন সময়ে পূর্বকথিত সেই উপদ্রব আরম্ভ সুইল । পটল চলিয়া গেলে আবার খানিরুক্ষণের জন্য সে নিশ্চিন্ত হইয়া একটুখানি নড়িয়া-চড়িয়া বেশ আরাম করিয়া বসিল- কাঠকুড়ানি মেয়ের প্রসঙ্গে ছেলেবেলাকার রূপকথার অলিগলির মধ্যে তাহার মন ঘূরিয়া বেড়াইতে লাগিল । এমন সময় আবার পটলের হাসিমাখ্যা কঠের কাকলিতে সে চমকিয়া উঠিল । পটল আর-একটি মেয়ের হাত ধরিয়া সবেগে টানিয়া আনিয়া যতীনের সম্মুখে স্থাপন করিল : কহিল, “ও কুড়ানি ।” মেয়েটি কহিল, “কী, দিদি ।” পটল । আমার এই ভাইটি কেমন দেখ দেখি । মেয়েটি অসংকোচে যতীনকে দেখিতে লাগিল । পটল কহিল, “কেমন, ভালো দেখিতে না ?” মেয়েটি গম্ভীরভাবে বিচার করিয়া ঘাড় নাডিয়া কহিল, “হা, ভালো ।” যতীন লাল হইয়া চৌকি ছাড়িয়া উঠিয়া কহিল, “আঃ পটল, কী ছেলেমানুযি করিতেছে।” পটল । আমি ছেলেমানুবি করি, না তুমি বুড়োমানুবি কর ! তোমার বুঝি বয়সের গাছপাথর নাই ! যতীন পলায়ন করিল। পটল তাহার পিছনে পিছনে দুটিতে ছুটিতে কহিল, “ও যতীন, তোমার ভয় নাই, তোমার ভয় নাই। এখনই তোমার মালা দিতে হইবে না- ফায়ুনচৈত্রে লগ্ন নাই- এখনো It is a "