পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ዓisiq}ዃû 8○○ পটল কহিল, “যতীন, একবার তুমি ও ঘরে যাও।” যতীন পাশের ঘরে গেলে পটল ব্যাগ খুলিয়া কুড়ানির সমস্ত কাপড়-গহনা তাহার মধ্য হইতে বাহির করিল। রোগিণীকে অধিক নাড়াচাড়া না করিয়া একখানি লাল বেনারসি শাড়ি সন্তপণে তাহার মলিন বন্ত্রের উপর জড়াইয়া দিল। পরে একে একে এক একগাছি চুড়ি তাহার হাতে দিয়া দুই হাতে দুই বালা পরাইয়া দিল । তার পরে ডাকিল, “যতীন ।” যতীন আসিতেই তাহাকে বিছানায় বসাইয়া পটল তাহার হাতে কুড়ানির একছড়া সোনার হার দিল ।। যতীন সেই হারছড়াটি লইয়া আন্তে আন্তে কুড়ানির মাথা তুলিয়া ধরিয়া তাহাকে পরাইয়া দিল । ভোরের আলো যখন কুড়ানির মুখের উপরে আসিয়া পড়িল তখন সে আলো সে আর দেখিল না। তাহার অম্লান মুখকান্তি দেখিয়া মনে হইল, সে মরে নাই- কিন্তু সে যেন একটি অতল স্পর্শ সুখস্বপ্নের মধ্যে নিমগ্ন হইয়া গেছে । যখন মৃতদেহ লইয়া যাইবার সময় হইল। তখন পটল কুড়ানির বুকের উপর পড়িয়া কাদিতে কঁাদিতে কহিল, “বোন, তোর ভাগ্য ভালো । জীবনের চেয়ে তোর মরণ সুখের ।” যতীন কুড়ানির সেই শান্তজিন্তু মৃত্যুচ্ছবির দিকে চাহিয়া ভাবিতে লাগিল, “যাহার ধন তিনিই নিলেন, उत्राभाक9 वशिष्ठ कब्रिएलन ना ।' 5 doo) কর্মফল প্ৰথম পরিচ্ছেদ আজ সতীশের মাসি সুকুমায়ী এবং মেসোেমশায় শশধর বাবু আসিয়াছেন- সতীশের মা বিধুমুখী ব্যস্তসমান্তভাবে তাহদের অভ্যর্থনায় নিযুক্ত। “এসো দিদি, বোসো। আজ কোন পুণ্যে রায়মশায়ের দেখা পাওয়া গেল ! দিদি না আসলে তোমার আর দেখা পাবার জো নেই ।” শশধর । এতেই বুঝবে তোমার দিদির শাসন কিরকম কড়া। দিনরাত্রি চোখে চোখে রাখেন । সুকুমারী। তাই বটে, এমন রত্ন ঘরে রেখেও নিশ্চিন্ত মনে ঘুমানো যায় না । বিধমুখী । নাকডাকার শব্দে ! সুকুমারী। সতীশ, ছিা ছি, তুই এ কী কাপড় পরেছিস । তুই কি এইরকম ধুতি পরে ইস্কুলে যাস। নাকি । বিধু, ওকে যে ফ্রকটা কিনে দিয়েছিলেম সে কী হল। বিধুমুখী । সে ও কোনকালে ছিড়ে ফেলেছে। সুকুমারী তা তো ছিড়বেই। ছেলেমানুষের গায়ে এক কাপড় কতদিন টেকে। তা, তাই বলে কি আর নূতন ফ্রক তৈরি করাতে নেই। তোদের ঘরে সকলই অনাসৃষ্টি । বিধমুখী । জানোই তো দিদি, তিনি ছেলের গায়ে সভ্য কাপড় দেখলেই আগুন হয়ে ওঠেন । আমি যদি না থাকতেম তো তিনি বোধ হয় ছেলেকে দোলাই গায়ে দিয়ে কোমরে ঘুনসি পরিয়ে ইস্কুলে পাঠাতেন- মাগো ! এমন সৃটিছাড়া পছন্দও কারও দেখি নি । সুকুমারী। মিছে না। এক বৈ ছেলে নয়- একে একটু সাজাতে গোজাতেও ইচ্ছা করে না ! এমন বাপও তো দেখি নি। সতীশ, পরশু রবিবার আছে, তুই আমাদের বাড়ি যাস, আমি তোর জন্যে এক সুট কাপড় র্যামজের ওখান হতে আনিয়ে রাখব। আহা, ছেলেমানুষের কি শখ হয় না। সতীশ । এক সুটে আমার কী হবে, মাসিমা । ভাদুড়ি সাহেবের ছেলে আমার সঙ্গে একসঙ্গে পড়ে, সে আমাকে তাদের বাড়িতে পিংপং খেলায় নিমন্ত্ৰণ করেছে- আমার তো সেরকম বাইরে যাবার মখমলের কাপড় নেই।