পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 Og রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী সতীশ । একটা মনিং সুট আর একটা লাউঞ্জ সুটে একশো টাকার কাছাকাছি লাগবে একটা চলনসই ইভনিং ড্রেস দেড়শো টাকার কমে কিছুতেই হবে না। বিধু। বল কী, সতীশ । এ তো তিনশো টাকার ধাক্কা, এত টাকা সতীশ । মা, ঐ তোমাদের দোষ । এক, ফকিরি করতে চাও সে ভালো আর যদি ভদ্রসমাজে মিশতে হয় তবে অমান টানাটানি করে চলে না। ভদ্রতা রাখতে গেলে তো খরচ করতে হবে, তার তো কোনো উপায় নেই। সুন্দরবনে পাঠিয়ে দাও-না কেন, সেখানে ড্রেস কোটের দরকার হবে না। বিধু। তা তো জানি, কিন্তু— আচ্ছা, তোমার মেসো তো তোমাকে জন্মদিনের উপহার দিয়ে থাকেন, এবারকার জন্য একটা নিমন্ত্রণের পোশাক তার কাছ হতে জোগাড় করে নাও-না। কথায় কথায় তোমার মাসির কাছে একটু আভাস দিলেই হয় । সতীশ । সে তো অনায়াসেই পারি, কিন্তু বাবা যদি টের পান আমি মেসোর কাছ হতে কাপড়' আদায় করেছি, তা হলে রক্ষা থাকবে না । বিধু । আচ্ছা, সে আমি সামলাতে পারব । সতীশের প্রস্থান ভাদুড়ি-সাহেবের মেয়ের সঙ্গে যদি সতীশের কোনোমতে বিবাহের জোগাড় হয় তা হলেও আমি সতীশের জন্য অনেকটা নিশ্চিন্ত থাকতে পারি। ভাদুড়ি-সাহেব ব্যারিস্টার মানুষ, বেশ দু-দশ টাকা রোজগার করে । ছেলেবেলা হতেই সতীশ তো ওদের বাড়ি আনাগোনা করে, মেয়েটি তো আর পাষাণ নয়, নিশ্চয় আমার সতীশকে পছন্দ করবে । সতীশের বাপ তো এ-সব কথা একবার চিন্তাও করেন না, বলতে গেলে আগুন হয়ে ওঠেন, ছেলের ভবিষ্যতের কথা আমাকেই সমান্ত ভাবতে হয় । ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ নলিনী । ও কী সতীশ, পালাও কোথায় । সতীশ । তোমাদের এখানে টেনিস পাটি জানতেম না, আমি টেনিস সুট পরে আসি নি । নলিনী । সকল গোরুর তো এক রঙের চামড়া হয় না, তোমার না হয় ওরিজিনাল বলেই নাম রটবে । আচ্ছা, আমি তোমার সুবিধা করে দিচ্ছি। মিস্টার নদী, আপনার কাছে আমার একটা অনুরোধ V নদী । অনুরোধ কেন, হুকুম বলুন-না- আমি আপনারই সেবাৰ্থে । নলিনী ! যদি একবারে অসাধ্য বোধ না করেন তো আজকের মতো আপনারা সতীশকে মাপ করবেন- ইনি আজ টেনিস সুট পরে আসেন নি। এতবড়ো শোচনীয় দুর্ঘটনা ! নদী । আপনি ওকালতি করলে খুন জাল ঘর-স্বালানোও মাপ করতে পারি। টেনিস সুট না পরে এলে যদি আপনার এত দয়া হয় তবে আমার এই টেনিস সুন্টটা মিস্টার সতীশকে দান করে ঠার এই— এটাকে কী বলি ! তোমার এটা কী সুটা সতীশ- খিচুড়ি সুটাই বলা যােক- তা আমি সতীশের এই খিচুড়ি সুন্টটা পরে রোজ এখানে আসিব । আমার দিকে যদি স্বর্গের সমন্ত সূৰ্য চন্দ্র তারা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। তবু লাজ করব না । সতীশ, এ কাপড়টা দান করতে যদি তোমার আপত্তি থাকে তবে তোমার দরজির ঠিকানাটা আমাকে দিয়ো । ফ্যাশনেবল ছাটের চেয়ে মিস ভাদুড়ির দয়া অনেক মূল্যবান । নলিনী । শোনো শোনো সতীশ, শুনে রাখে। কেবল কাপড়ের ইট নয়, মিষ্ট কথার ছাদও তুমি মিস্টার নদীর কাছে শিখতে পাের। এমন আদর্শ আর পাবে না। বিলাতে ইনি ডিউক ডাচেস ছাড়া আর কারও সঙ্গে কথাও কন নি। মিস্টার নদী, আপনাদের সময় বিলাতে বাঙালি ছাত্র কে কে ছিল।