পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8(28 রবীন্দ্র-রচনাবলী পেয়ারা পড়তে এসেছে। ওর আকাঙ্ক্ষা ঐ কঁচা পেয়ারার চেয়ে আর অধিক উর্ধে চড়ে নি- ঐ গাছের নিচু ডালেই ওর অধিকাংশ সুখ ফলে আছে। পৃথিবীতে ওর জীবনের কী মূল্য । গাছের একটা কঁচা পেয়ারা যেমন, এ সংসারে ওর কঁচা জীবনটাই বা তার চেয়ে কী এমন বড়ো । এখনই যদি ছিন্ন করা যায়। তবে জীবনের কত নৈরাশ্য হতে ওকে বাচানো যায় তা কে বলতে পারে। আর মাসিমাইঃ ! একেবারে লুটাপুটি করতে থাকবে। আঃ ! ঠিক সময়টি, ঠিক স্থানটি, ঠিক লোকটি । হাতকে আর সামলাতে পাচ্ছি নে । হাতটাকে নিয়ে কী করি । হাতটাকে নিয়ে কী করা যায় । ছড়ি লইয়া সতীশ সবেগে চারাগাছগুলিকে ক্রমাগত আঘাত করিতে লাগিল। তাহাতে তাহার উত্তেজনা ক্রমশ আরো বাড়িয়া উঠিতে লাগিল । অবশেষে নিজের হাতকে সে সবেগে আঘাত করিল ; কিন্তু কোনো বেদনা বোধ করিল না । শেষে পকেটের ভিতর হইতে পিস্তল সংগ্ৰহ করিয়া লইয়া সে হারেনের দিকে সবেগে অগ্রসর হইতে লাগিল । হরেন । ( চমকিয়া উঠিয়া ) এ কী ! দাদা নাকি । তোমার দুটি পায়ে পড়ি দাদা, তোমার দুটি পায়ে পড়ি- বাবাকে বলে দিয়ে না । সতীশ । ( চীৎকার কবিতা) মেসোমশায়- মেসোমশায়- এইবোলা রক্ষা করে- আর দেরি কোরো না- তোমার ছেলেকে এখনো রক্ষা করে । শশধর । (ছুটিয়া আসিয়া ) কী হয়েছে সতীশ । কী হয়েছে। সুকুমারী । (ছুটিয়া আসিয়া ) কী হয়েছে, আমার বাছার কী হয়েছে। হরেন । কিছুই হয় নি মা— কিছুই না- দাদা তোমাদের সঙ্গে ঠাট্টা করছেন । সুকুমারী। এ কিরকম বিশ্ৰী ঠাট্টা । ছি ছি, সকলই অনাসৃষ্টি ! দেখো দেখি। আমার বুক এখনো ধড়াস-ধড়াস করছে। সতীশ মদ ধরেছে বুঝি ! সতীশ । পালাও- তোমাদের ছেলেকে নিয়ে এখনই পালাও । নইলে তোমাদের রক্ষা নেই। শশধর । সতীশ, আমন উতলা হোয়ো না । ব্যাপারটা কী বলে । হরেনকে কার হােত হতে রক্ষা করবার জন্য ডেকেছিলে । সতীশ । আমার হাত হতে । (পিস্তল দেখাইয়া) এই দেখো মেসোেমশায় । দ্রুতপদে বিধুমুখীর প্রবেশ বিধু । সতীশ, তুই কোথায় কী সর্বনাশ করে এসেছিস বল দেখি। আপিসের সাহেব পুলিস সঙ্গে নিয়ে আমাদের বাড়িতে থানাতল্লাসি করতে এসেছে । যদি পালাতে হয় তো এইবোলা পালা। হায় ভগবান ! আমি তো কোনো পাপ করি নি, আমারই অদৃষ্ট এত দুঃখ ঘটে কেন । সতীশ । ভয় নেই- পালাবার উপায় আমার হাতেই আছে ! শশধর । তবে কি তুমিসতীশ । তাই বটে মেসোেমশায়- যা সন্দেহ করছ, তাই । আমি চুরি করে মাসির ঋণ শোধ করেছি। আমি চোর। মা, শুনে খুশি হবে, আমি চোর, আমি খুনী । এখন আর কাদতে হবে নাযাও যাও, আমার সম্মুখ হতে যাও । আমার অসহ্য বোধ হচ্ছে । । শশধর । সতীশ, তুমি আমার কাছেও তো কিছু ঋণী আছ, তাই শোধ করে যাও । সতীশ । বলে, কেমন করে শোধ করব। কী আমি দিতে পারি। কী চাও তুমি । শশধর । ঐ পিস্তলটি দাও ।