পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Treu 8t করিতে হয় বলিয়া আমি না থাকিলে তিনি ইহাক ছাড়িয়া বঁাচোন। এ বিবাহ যদি হয় তবে আমি বাড়িতে থাকিতে পারিব না । আমাকে আপনি উদ্ধারের একটা পথ দেখাইয়া দিন- আমি স্বতন্ত্ৰ হইতে চাই ।” জেহে ও বেদনায় হরলালের হৃদয় পরিপূর্ণ হইয়া উঠিল। সংকটের সময় আর সকলকে ফেলিয়া বেণু যে তাহার সেই মাস্টারমশায়ের কাছে আসিয়াছে, ইহাতে কষ্ট্রের সঙ্গে সঙ্গে তাহার আনন্দ হইল । কিন্তু মাস্টারমশায়ের কতটুকুই বা সাধ্য আছে। বেণু কহিল, “যেমন করিয়া হােক, বিলাতে গিয়া ব্যারিস্টার হইয়া আসিলে এই বিপদ হইতে পরিত্রাণ পাই ।” হরলাল কহিল, “অধরবাবু কি যাইতে দিবেন।” বেণু কহিল, “আমি চলিয়া গেলে তিনি বাচেন । কিন্তু টাকার উপরে যেরকম মায়া, বিলাতের খরচ তাহার কাছ হইতে সহজে আদায় হইবে না। একটু কৌশল করিতে হইবে।” হরলাল বেপুর বিজ্ঞতা দেখিয়া হাসিয়া কহিল, “কী ঢেঁকীশাল।” বেণু কহিল, “আমি হ্যান্ডনেটে টাকা ধার করিব। পাওনাদার আমার নামে নালিশ করিলে বাবা তখন দায়ে পড়িয়া শোধ করিবেন। সেই টাকায় পালাইয়া বিলাত যাইব । সেখানে গেলে তিনি খরচ না দিয়া থাকিতে পারিকেন না ।” হরলাল কহিল, “তোমাকে টাকা ধার দিবে কে ।” বেণু কহিল, “আপনি পারেন না ?” হরলাল আশ্চর্য হইয়া কহিল, “আমি !” তাহার মুখে আর কোনো কথা বাহির হইল না । বেণু কহিল, “কেন, আপনার দরোয়ান তো তোড়ায় করিয়া অনেক টাকা ঘরে আনিল ।” হরলাল হাসিয়া কহিল, “সে দরোয়ানও যেমন আমার, টাকাও তেমনি ।” বলিয়া এই আপিসের টাকার ব্যবহারটা কী তাহা বেণুকে বুঝাইয়া দিল। এই টাকা কেবল একটি রাত্রের জন্যই দরিদ্রের ঘরে আশ্ৰয় লয়, প্ৰভাত হইলে দশ দিকেতে গমন করে । বেণু কহিল, “আপনাদের সাহেব আমাকে ধার দিতে পারেন না ? নাহয় আমি সুদ বেশি করিয়া দিব ।” হরলাল কহিল, “তোমার বাপ যদি সিকিউরিটি দেন তাহা হইলে আমার অনুরোধে হয়তো দিতেও পারেন ।” বেণু কহিল, “বাবা যদি সিকিউরিটি দিবেন তো টাকা দিবেন না কেন।” তর্কটা এইখানেই মিটিয়া গেল। হরলাল মনে মনে ভাবিতে লাগিল, “আমার যদি কিছু থাকিত, তবে বাড়িঘর জমিজমা সমন্ত বেচিয়া-কিনিয়া টাকা দিতাম।” কিন্তু একটিমাত্র অসুবিধা এই যে, साफियन अभिछभा किई नई । So একদিন শুক্রবার রাত্রে হরলালের বাসার সম্মুখে জুড়িগড়ি দাড়াইল । বেণু গাড়ি হইতে নামিবামাত্র হরলালের আপিসের দরোয়ান তাহকে মন্ত একটা সেলাম করিয়া উপরে বাবুকে শশব্যান্ত হইয়া সংবাদ দিতে গেল। হরলাল তখন তাহার শোবার ঘরে মেজের উপর বসিয়াটাকা মিলাইয়া লইতেছিল। বেণু সেই ঘরেই প্রবেশ করিল। আজ তাহার বেশ কিছু নূতন ধরনের। শৌখিন ধুতিচাদরের বদলে নধর শরীরে পশি কোটি ও প্যান্টলুন আঁটিয়া মাথায় ক্যাপ পরিয়া আসিয়াছে। তাহার দুই হাতের আঙুলে মণিমুক্তার আংটি ঝকমক করিতেছে। গলা হইতে লখিত মোটা সোনার চেনে আবদ্ধ ঘড়ি বুকের পকেটে নিবিষ্ট । কোটের অভিনেয়। ভিতর হইতে জামার হাতায় হীরার বোতাম দেখা যাইতেছে। হরলাল টাকা গোনা বন্ধ করিয়া আশ্চর্য হুইয়া কহিল, “এ কী ব্যাপার। এত রাত্রে এ বেশে যে ?” বেণু কহিল, "পরশু বাবার বিবাহ। তিনি আমার কাছে তাহা গোপন করিয়া রাখিয়াছেন, কিন্তু আমি