পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

pgob 8Գ ( সকালবেলাকার আলোক যখন পরিস্ফুট হইয়া উঠিল তখন সে বাহিরের চণ্ডীমণ্ডপে আসিয়া মাথায় হাত দিয়া বসিয়া ভাবিতে লাগিল । সমস্ত রাত্রি অনিদ্রার পর ক্লান্ত শরীরে একটু তন্দ্ৰা আসিয়াছে, এমন সময়ে হঠাৎ চমকিয়া উঠিয়া শুনিল, “জয় হোক, বাবা ।” সম্মুখে প্রাঙ্গণে এক জটাজুটধারী সন্ন্যাসী । মৃত্যুজয় ভক্তিভরে তাহাকে প্ৰণাম করিল। সন্ন্যাসী তাহার মাথায় হাত দিয়া আশীর্বাদ করিয়া কহিলেন, “বাবা, তুমি মনের মধ্যে বৃথা শোক করিতেছি।” শুনিয়া মৃত্যুজয় আশ্চর্য হইয়া উঠিল- কহিল, “আপনি অন্তর্যামী, নহিলে আমার শোক কেমন করিয়া বুঝিলেন । আমি তো কাহাকেও কিছু বলি নাই।” সন্ন্যাসী কহিলেন, “বৎস, আমি বলিতেছি, তোমার যাহা হারাইয়াছে সেজন্য তুমি আনন্দ করো, শোক করিয়ো না ।” মৃত্যুজয় তাহার দুই পা জড়াইয়া ধরিয়া কহিল, “আপনি তবে তো সমস্তই জানিয়াছেন- কেমন করিয়া হারাইয়াহে, কোথায় গেলে ফিরিয়া পাইব, তাহা না বলিলে আমি আপনার চরণ ছাড়িব না ।” সন্ন্যাসী কহিলেন, “আমি যদি তোমার অমঙ্গল কামনা করিতাম। তবে বলিতাম। কিন্তু ভগবতী দয়া করিয়া যাহা হরণ করিয়াছেন। সেজন্য শোক করিয়ো না ।” মৃত্যুঞ্জয় সন্ন্যাসীকে প্রসন্ন করিবার জন্য সমস্তদিন বিবিধ উপচারে তাহার সেবা করিল। পরদিন প্ৰত্যুষে নিজের গোহাল হইতে লোটা ভরিয়া সফেন দুগ্ধ দুহিয়া লইয়া আসিয়া দেখিল, সন্ন্যাসী নাই । R মৃত্যুজয় যখন শিশু ছিল, যখন তাহার পিতামহ হরিহর একদিন এই চণ্ডীমণ্ডপে বসিয়া তামাক খাইতেছিল, তখন এমনি করিয়াই একটি সন্ন্যাসী “জয় হোক, বাবা’ বলিয়া এই প্রাঙ্গণে আসিয়া দাড়াইয়াছিলেন । হরিহর সেই সন্ন্যাসীকে কয়েকদিন বাড়িতে রাখিয়া বিধিমত সেবার দ্বারা সন্তুষ্ট করিল । বিদায়কালে সন্ন্যাসী যখন জিজ্ঞাসা করিলেন, “বৎস, তুমি কী চাও” হরিহর কহিল, “বাবা যদি হইয়া থাকেন তবে আমার অবস্থাটা একবার শুনুন। এককালে এই গ্রামে আমরা সকলের চেয়ে বর্ধিষ্ণু ছিলাম। আমার প্রপিতামহ দূর হইতে কুলীন আনাইয়া তাহার এক কন্যার বিবাহ দিয়াছিলেন। তাহার সেই দৌহিত্রবংশ আমাদিগকেই ফাকি দিয়া আজকাল এই গ্রামে বড়োলোক হইয়া উঠিয়াছে। আমাদের এখন অবস্থা ভালো নয়, কাজেই ইহাদের অহংকার সহ্য করিয়া থাকি । কিন্তু আর সহ্য হয় না । কী করিলে আবার আমাদের বংশ বড়ো হইয়া উঠিবে সেই উপায় বলিয়া দিন, সেই আশীর্বাদ कान् ।।' সন্ন্যাসী ঈষৎ হাসিয়া কহিলেন, “বাবা, ছোটাে হইয়া সুখে থাকো। বড়ো হইবার চেষ্টায় শ্ৰেয় দেখি नां ।" কিন্তু হরিহর তবু ছাড়িল না, বংশকে বড়ো করিবার জন্য সে সমস্ত স্বীকার করিতে রাজি আছে। তখন সন্ন্যাসী তাহার বুলি হইতে কাপড়ে মোড়া একটি তুলট কাগজের লিখন বাহির করিলেন । কাগজখানি দীর্ঘ, কোষ্ঠীপত্রের মতো গুটানো । সন্ন্যাসী সেটি মেজের উপরে খুলিয়া ধরিলেন । হরিহর দেখিল, তাহাতে নানাপ্রকার চক্ৰে নানা সাংকেতিক চিহ্ন আঁকা ; আর সকলের নিম্নে একটি প্ৰকাণ্ড ছড়া লেখা আছে, তাহার আরম্ভটা এইরূপ : 93 GK FT রা নাহি দেয় রাধা । শেষে দিলে রা, পাগোল ছাড়ো পা ৷ Y) Y VSY