পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী 8 AVe তেঁতুল-বটের কোলে Af VebG I ঈশানকোণে ঈশানী, কহে দিলাম নিশানী। ইত্যাদি হরিহর কহিল, “বাবা, কিছুই তো বুঝিলাম না।” সন্ন্যাসী কহিলেন, “কাছে রাখিয়া দাও, দেবীর পূজা করো। তাহার প্রসাদে তোমার বংশে কেহ-না-কেহ এই লিখন বুঝিতে পরিবে। তখন সে এমন ঐশ্বৰ্য পাইবে জগতে যাহার তুলনা নাই।” BDBD DDDBD DBB DBDSBBD D DDBBD BBB DS সন্ন্যাসী কহিলেন, “না। সাধনা দ্বারা বুঝিতে হইবে।” এমন সময় হরিহরের ছোটাে ভাই শংকর আসিয়া উপস্থিত হইল। তাহাকে দেখিয়া হরিহর তাড়াতাড়ি লিখনটি লুকাইবার চেষ্টা করিল। সন্ন্যাসী হাসিয়া কহিলেন, “বড়ো হইবার পথের দুঃখ এখন হইতেই শুরু হইল । কিন্তু গোপন করিবার দরকার নাই । কারণ, ইহার রহস্য কেবল একজনমােত্রই ভেদ করিতে পরিবে, হাজার চেষ্টা করিলেও আর-কেহ তাহা পরিবে না । তোমাদের মধ্যে সেই লোকটি যে কে তাহ কেহ জানে না। অতএব ইহা সকলের সম্মুখেই নিৰ্ভয়ে খুলিয়া রাখিতে পারো ।” সন্ন্যাসী চলিয়া গেলেন। কিন্তু হরিহর এ কাগজটি লুকাইয়া না রাখিয়া থাকিতে পারিল না। পাছে আর কেহ ইহা হইতে লাভবান হয়, পাছে তাহার ছোটো ভাই শংকর ইহার ফলভোগ করিতে পারে, এই আশঙ্কায় হরিহর এই কাগজটি একটি কঁঠালকাঠের বাক্সে বন্ধ করিয়া তাহাদের গৃহদেবতা জয়কালীর আসনতলে লুকাইয়া রাখিল । প্রত্যেক অমাবস্যায় নিশীথরাত্রে দেবীর পূজা সারিয়া সে একবার করিয়া সেই কাগজটি খুলিয়া দেখিত, যদি দেবী প্ৰসন্ন হইয়া তাহাকে অর্থ বুঝিবার শক্তি ८ ।। শংকর কিছুদিন হইতে হরিহরকে মিনতি করিতে লাগিল, “দাদা, আমাকে সেই কাগজটা একবার ভালো করিয়া দেখিতে দাও-না ।” হরিহর কহিল, “দূর পাগল। সে কাগজ কি আছে। বেটা ভগুসন্ন্যাসী কাগজে কতকগুলা হিজিবিজি কাটিয়া আমাকে ফাকি দিয়া গেল- আমি সে পুড়াইয়া ফেলিয়াছি।” শংকর চুপ করিয়া রহিল। হঠাৎ একদিন শংকরকে ঘরে দেখিতে পাওয়া গেল না। তাহার পর হইতে সে নিরুদ্দেশ । হরিহরের অন্য সমস্ত কাজকর্ম নষ্ট হইল- গুপ্ত ঐশ্বর্যের ধ্যান এক মুহুর্ত সে ছাড়িতে পারিল না। মৃত্যুকাল উপস্থিত হইলে সে তাহার বড়ো ছেলে শ্যামাপদকে এই সন্ন্যাসীদত্ত কাগজখানি দিয়া গেল । এই কাগজ পাইয়া শ্যামাপদ চাকরি ছাড়িয়া দিল। জয়কালীর পূজায় আর একান্তমনে এই লিখনপাঠের চর্চায় তাহার জীবনটা যে কোন দিক দিয়া কাটিয়া গেল তাহা বুঝিতে পারিল না। মৃত্যুজয় শ্যামাপদর বড়ো ছেলে । পিতার মৃত্যুর পরে সে এই সন্ন্যাসীদত্ত গুপ্তলিখনের অধিকারী হইয়াছে। তাহার অবস্থা উত্তরোত্তর যতই হীন হইয়া আসিতে লাগিল, ততই অধিকতর আগ্রহের সহিত ঐ কাগজখানির প্রতি তাহার সমন্ত চিত্ত নিবিষ্ট হইল। এমন সময় গত অমাবস্যারাত্রে পূজার পর লিখন খানি আর দেখিতে পাইল না- সন্ন্যাসীও কোথায় অন্তর্ধন করিল। মৃত্যুজয় কহিল, এই সন্ন্যাসীকে ছাড়া হইবে না । সমান্ত সন্ধান ইহার কাছ হইতেই মিলিবে । এই বলিয়া সে ঘর ছাড়িয়া সন্ন্যাসীকে খুজিতে বাহির হইল। এক বৎসর পথে পথে কাটিয়া গেল ।