পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ዓig®ዃ.. 8Գծ সন্ন্যাসী একবার করিয়া অঙ্ক কবিতেছে আর একটা মাপকাঠি লইয়া জমি মাপিতেছে- কিয়দুর মাপিয়া হতাশ হইয়া ঘাড় নাড়িয়া পুনর্বার আসিয়া অঙ্ক কবিতে প্ৰবৃত্ত হইতেছে। এমনি করিয়া রাত্রি যখন অবসানপ্রায়, যখন নিশাস্তের শীতবায়ুতে বনস্পতির অগ্রশাখার পল্লবগুলি মর্মরিত হইয়া উঠিল, তখন সন্ন্যাসী সেই লিখনপত্র গুটিাইয়া লইয়া চলিয়া গেল । মৃত্যুঞ্জয় কী করিবে ভাবিয়া পাইল না । ইহা সে নিশ্চয় বুঝিতে পারিল যে, সন্ন্যাসীর সাহায্য ব্যতীত এই লিখনের রহস্য ভেদ করা তাহার সাধ্য হইবে না। লুব্ধ সন্ন্যাসী যে মৃত্যুজয়কে সাহায্য করিবে না। তাহাও নিশ্চিত । অতএব গোপনে সন্ন্যাসীর প্রতি দৃষ্টি রাখা ছাড়া অন্য উপায় নাই। কিন্তু দিনের বেলায় গ্রামে না গেলে তাহার আহার মিলিবে না ; অতএব অন্তত কাল সকালে একবার গ্রামে যাওয়া আবশ্যক । ভোরের দিকে অন্ধকার একটু ফিকা হইবামাত্র সে গাছ হইতে নামিয়া পড়িল । যেখানে সন্ন্যাসী ছাইয়ের মধ্যে আঁক কবিতেছিল। সেখানে ভালো করিয়া দেখিল, কিছুই বুঝিল না। চতুদিকে ঘুরিয়া দেখিল, অন্য বনখণ্ডের সঙ্গে কোনো প্ৰভেদ নাই । বনতলের অন্ধকার ক্রমে যখন ক্ষীণ হইয়া আসিল তখন মৃত্যুজয় অতি সাবধানে চারি দিক দেখিতে দেখিতে গ্রামের উদ্দেশে চলিল । তাহার ভয় ছিল পাছে সন্ন্যাসী তাহকে দেখিতে পায় । যে দোকানে মৃত্যুঞ্জয় আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছিল তাহার নিকটে একটি কায়স্থ গৃহিণী ব্ৰত উদযাপন করিয়া সেদিন ব্ৰাহ্মণভোজন করাইতে প্ৰবৃত্ত ছিল । সেইখানে আজ মৃত্যুঞ্জয়ের আহার জুটিয়া গেল । কয়দিন আহারের কষ্টের পর আজ তাহার ভোজনটি গুরুতর হইয়া উঠিল । সেই গুরুভোজনের পর যেমন তামাকটি খাইয়া দোকানের মাদুরটিতে একবার গড়াইয়া লইবার ইচ্ছা করিল, অমনি গত রাত্রির অনিদ্রাকাতর মৃত্যুঞ্জয় ঘুমে আচ্ছন্ন হইয়া পড়িল । মৃত্যুঞ্জয় স্থির করিয়াছিল, আজ সকাল-সকাল আহারাদি করিয়া যথেষ্ট বেলা থাকিতে বাহির হইবে । ঠিক তাহার উলটা হইল। যখন তাহার নিদ্ৰাভঙ্গ হইল তখন সূর্য অস্ত গিয়াছে। তবু মৃত্যুঞ্জয় দমিল না । অন্ধকারেই বনের মধ্যে সে প্রবেশ করিল। দেখিতে দেখিতে রাত্রি ঘনীভূত হইয়া আসিল । গাছের ছায়ার মধ্যে দৃষ্টি আর চলে না, জঙ্গলের মধ্যে পথ অবরুদ্ধ হইয়া যায়। মৃত্যুজয় যে কোন দিকে কোথায় যাইতেছে তাহা কিছুই ঠাহর পাইল না । রাত্রি যখন অবসান হইল তখন দেখিল, সমস্ত রাত্রি সে বনের প্রান্তে একই জায়গায় ঘুরিয়া ঘুরিয়া বেড়াইয়াছে । কাকের দল কা কা শব্দে গ্রামের দিকে উড়িল । এই শব্দ মৃত্যুঞ্জয়ের কানে বাঙ্গাপূৰ্ণ ধিককারবাকোর x esă || Ve গণনায় বারংবার ভুল আর সেই ভুল সংশোধন করিতে করিতে অবশেষে সন্ন্যাসী সুরঙ্গের পথ আবিষ্কার করিয়াছেন । সুরঙ্গের মধ্যে মশাল লইয়া তিনি প্রবেশ করিলেন । বাধানো ভিত্তির গায়ে সঁ্যাতলা পড়িয়ছে- মাঝে মাঝে এক-এক জায়গায় জল চুইয়া পড়িতেছে। স্থানে স্থানে কতকগুলা ভোক গায়ে গায়ে ত্বপাকার হইয়া নিদ্রা দিতেছে। এই পিছল পথ দিয়া কিছুদূর যাইতেই সন্ন্যাসী । দেখিলেন, সম্মুখে দেয়াল উঠিয়াছে, পথ অবরুদ্ধ। কিছুই বুঝিতে পারিলেন না। দেয়ালের সর্বত্র লৌহদণ্ড দিয়া সবলে আঘাত করিয়া দেখিলেন, কোথাও ফাক আওয়াজ দিতেছে না, কোথাও রাজা নাই, এই পথটার যে এইখানেই শেষ তাহ নিঃসন্দেহ । আবার সেই কাগজ খুলিয়া মাথায় হাত দিয়া বসিয়া ভাবিতে লাগিলেন। সে রাত্রি এমনি করিয়া কাটিয়া গেল । পরদিন পুনর্বাের গণনা সারিয়া সুরাঙ্গে প্রবেশ করিলেন। সেদিন গুপ্তসংকেত অনুসরণপূর্বক একটি