পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

se 8) কেহই তাহকে নিবারণ করিতে পরিবে না ।” এ কথা শুনিয়া ভবানীচরণ অনেকটা সান্ধনা পাইলেন । গামছায় বাধা পুরানো সমস্ত নথি বাহির কাজটা কালীপদ বেশ বিচক্ষণতার সঙ্গেই চালাইতেছিল, কিন্তু পিতার মন্ত্রণাসভায় সে জোর পাইল না । কেননা তাহদের পরিবারের এই প্ৰাচীন অন্যায়াটা সম্বন্ধে তাহার মনে যথেষ্ট উত্তেজনা ছিল না । তবু সে পিতার কথায় সায় দিয়া গেল। সীতাকে উদ্ধার করিবার জন্য বীরশ্ৰেষ্ঠ রাম যেমন লঙ্কায় যাত্রা করিয়াছিলেন, কালীপদার কলিকাতায় যাত্রাকেও ভবানীচরণ তেমনি খুব বড়ো করিয়া দেখিলেন- সে কেবল সামান্য পাস করার ব্যাপার নয়- ঘরের লক্ষ্মীকে ঘরে ফিরাইয়া আনিবার আয়োজন । এবং তাহার হাতে একটি পঞ্চাশ টাকার নোট দিয়া বলিয়া দিলেন- এই নোটটি রাখিয়ো, আপদে বিপদে প্রয়োজনের সময় কাজে লাগিবে । সংসার খরচ হইতে অনেক কষ্ট্রেট জমানো এই নোটটিকেই কালীপদ যথার্থ পবিত্র কবিচের ন্যায় জ্ঞান করিয়া গ্ৰহণ করিল- এই নোটটিকে মাতার আশীর্বাদের মতো সে চিরদিন রক্ষা করিবে, কোনোদিন খরচ করিবে না, এই সে মনে মনে সংকল্প করিল। VO) ভবানীচরণের মুখে উইল-চুরির কথাটা এখন আর তেমন শোনা যায় না। এখন তাহার একমাত্র আলোচনার বিষয় কালীপদ । তাহারই কথা বলিবার জন্য তিনি এখন সমন্ত পাড়া ঘুরিয়া বেড়ান। তাহার চিঠি পাইলে ঘরে ঘরে তাহা পড়িয়া শুনাইবার উপলক্ষে নাকি হইতে চশমা আর নামিতে চায় না । কোনোদিন এবং কোনো পুরুষে কলিকাতায় যান নাই বলিয়াই কলিকাতার গীেরববোধে তাহার কল্পনা অত্যন্ত উত্তেজিত হইয়া উঠিল । আমাদের কালীপদ কলিকাতায় পড়ে এবং কলিকাতার কোনো সংবাদই তাহার অগোচর নাই- এমন-কি, হুগলির কাছে গঙ্গার উপর দ্বিতীয় আর-একটা পুল বাধা হইতেছে, এ-সমন্ত বড়ো বড়ো খবর তাহার কাছে নিতান্ত ঘরের কথা মাত্ৰ । “শুনেছ ভায়া, গঙ্গার উপর আর-একটা যে পুল বাধা হচ্ছে- আজই কালীপদার চিঠি পেয়েছি, তাতে সমন্ত খবর লিখেছে"- বলিয়া চশমা খুলিয়া তাহার কাচ ভালো করিয়া মুছিয়া চিঠিখানা অতি ধীরে ধীরে আদ্যোপান্ত প্ৰতিবেশীকে পড়িয়া শুনাইলেন । “দেখছি ভায়া ! কালে কালে কতই যে কী হবে তার ঠিকানা নেই। শেষকালে ধুলোপায়ে গঙ্গার উপর দিয়ে কুকুরশেয়ালগুলোও পার হয়ে যাবে, কলিতে এও ঘটল হে !” গঙ্গার এইরূপ মাহাত্ম্যখর্ব নিঃসন্দেহই শোচনীয় ব্যাপার, কিন্তু কালীপদ যে কলিকালের এতবড়ো একটা জয় বার্তা তাহাকে লিপিবদ্ধ করিয়া পঠাইয়াছে এবং গ্রামের নিতান্ত অজ্ঞ লোকেরা এ খবরটা তাহারই কল্যাণে জানিতে পারিয়াছে, সেই আনন্দে তিনি বর্তমান যুগে জীবের । অসীম দুৰ্গতির দুশ্চিন্তাও অনায়াসে ভুলিতে পারিলেন । যাহার দেখা পাইলেন তাহারই কাছে মাথা নাড়িয়া কহিলেন, “আমি বলে দিচ্ছি, গঙ্গা আর বেশি দিন নাই।” মনে মনে এই আশা করিয়া রহিলেন, গঙ্গা যখনই যাইবার উপক্রম করবেন তখনই সে খবরটা সর্বপ্রথমে কালীপদার চিঠি হইতেই পাওয়া यदि । এ দিকে কলিকাতায় কালীপদ বহুকষ্ট্রেট পরের বাসায় থাকিয়া ছেলে পড়াইয়া রাত্রে হিসাবের খাতা নকল করিয়া পড়াশুনা চালাইতে লাগিল। কোনোমতে এনট্রোল পরীক্ষা পার হইয়া পুনরায় সে বৃত্তি পাইল । এই আশ্চর্য ঘটনা উপলক্ষে সমান্ত গ্রামের লোককে প্ৰকাণ্ড একটা ভোজ দিবার জন্য ভবানীচরণ ব্যন্ত হইয়া পড়িলেন । তিনি ভাবিলেন, তরী তো প্রায় কুলে আসিয়া ভিড়িল- সেই সাহসে এখন হইতে মন খুলিয়া খরচ করা যাইতে পারে । রাসমণির কাছে কোনো উৎসাহ না oftesTV (NEIUNG IN sv | কালীপদ এবার কলেজের কাছে একটি মেসে আশ্রয় পাইল । মেসের যিনি অধিকারী তিনি তাহাকে