পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(8 S. পাঠকের কিছুমাত্র খটকা লেগেছে বলে আমি জানি নে, কেননা তারা সবাই কান পেতে পড়েছে, নিয়ম পেতে নয় । যদি কর্তব্যবোধে নিতান্তই খটকা লাগা উচিত হয়, তা হলে সমস্ত বাংলাকাব্যের পনেরো-আনা লাইনের এখনই প্রফ সংশোধন করতে বসতে হবে । লেখক আমার একটা মস্ত ফাকি ধরেছেন । তিনি বলেন, আমি ইচ্ছামত কোথাও "ঐ" লিখি, কোথাও লিখি “ওই, এই উপায়ে পাঠকের চোখ ভুলিয়ে অক্ষরের বাটখারার চাতুরীতে একই উচ্চারণকে জায়গা বুঝে দুইরকমের মূল্য দিয়েছি। তা হলে গোড়াকার ইতিহাসটা বলি । তখনকার দিনে বাংলা কবিতায় এক-একটি অক্ষর এক সিলেবল বলেই চলত। অথচ সেদিন কোনো কোনো ছন্দে যুগ্মধ্বনিকে দ্বৈমাত্রিক বলে গণ্য করার দরকার আছে বলে অনুভব করেছিলুম। আকাশের ওই আলোর কাপন 3(NONTE R 5. সেই মিলনের তড়িৎ-তাপন নিখিলের রূপে জাগে । আজকের দিনে এমন কথা অতি অর্বািচীনকেও বলা অনাবশ্যক যে, ঐ ত্রৈমাত্রিক ভূমিকার ছন্দকে নীচের মতে রূপান্তরিত করা অপরাধ ঐ যে তপনের রশ্মির কম্পন এই মস্তিষ্কেতে লাগে, অথচ সেদিন বৃত্ৰসংহারে এইজাতীয় ছন্দে হেমচন্দ্ৰ ঐন্দ্রিলার রূপবর্ণনায় তুমসংকোচে লিখতে পেরেছিলেন বদনমণ্ডলে ভাসিছে শ্ৰীড়া । বেশ মনে আছে, সেদিন স্থানবিশেষে "ঐ" শব্দের বানান নিয়ে আমাকে ভাবতে হয়েছিল । প্ৰবোধচন্দ্ৰ নিশ্চয় বলবেন, “ ভেবে যা হয় একটা স্থির করে ফেলাই ভালো ছিল । কোথাও বা 'ঐ' কোথাও বা ‘ওই বানান কেন ।” তার উত্তর এই, বাংলার স্বরের হ্রস্বদীর্ঘতা সংস্কৃতের মতো বাধা নিয়ম মানে না, ওর মধ্যে অতি সহজেই বিকল্প চলে। “ও— ই দেখো, খোকা ফাউন্টেন পেন মুখে পুরেছে”, এখানে দীর্ঘ ওকারে কেউ দোষ ধরবে না । আবার যদি বলি, “ঐ দেখো, ফাউন্টেন পেনাটা খেয়ে ফেললে বুঝি", তখন হ্রস্থ ঐকার নিয়ে বাচসা করবার লোক মিলবে না । বাংলা উচ্চারণে স্বরের ধ্বনিতে টান দিয়ে অতি সহজেই বাড়ানো-কমানো যায় বলেই ছন্দে তার গৌরব বা লাঘব নিয়ে আজ •र्यंड प्रत्नाप्रक्र्नि श्ट्र नि । এ-সব কথা দুষ্টান্ত না দিলে স্পষ্ট হয় না, তাই দৃষ্টান্ত তৈরি করতে হল । মনে পড়ে দুইজনে জুই তুলে বাল্যে নিরালায় বনছায় গেথেছিনু মালো । দোহার তরুণ প্ৰাণ বেঁধে দিল গন্ধে আলোয়-আঁধারে-মেশা নিভৃত আনন্দে । এখানে দুই’। ‘জুই' আপন আপনি উকারকে দীর্ঘ করে দুই সিলেবল-এর টিকিট পেয়েছে, বানি তাদের সাধুতায় সন্দেহ করলে না, দ্বার ছেড়ে দিলে। উলটাে দৃষ্টান্ত দেখাই ।